সরকারি নির্দেশনা ও শ্রম আইন না মানায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) কুষ্টিয়া লিফ ফ্যাক্টরির সামনে ২২ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে কোম্পানির মৌসুমী শ্রমিক ও ১১ জন বাইরে থাকা শ্রমিক। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল ২০২৫) সকাল ৮ টা থেকে নগরীরের চৌড়হাস মোড় সংলগ্ন বিএটিবি’র কারখানার সামনে তারা এ ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু করে।
অবস্থান কর্মসূচিতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ২০১২ সাল থেকে কোম্পানির পাওনা মুনাফা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, এক নিয়োগপত্র, আইন বহির্ভূতভাবে বাইরে রাখা শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহালসহ ২২দফা দাবি পুরণ করতে হবে।
বিএটিবির কুষ্টিয়া লিফ ফ্যাক্টরির মৌসুমী শ্রমিকদের ২২ দফা দাবির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পর গত ১৭ এপ্রিল ২০২৫ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিকদের দাবি দাওয়াসমূহ ৩ কর্মদিবসের (২২ এপ্রিল) মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিলুফা ইয়াসমিন উপসচিব স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে প্লান্ট ম্যানেজার, জিএলটি প্লান্ট বরাবর নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু সচিবালয় প্রদত্ত সেই ৩ দিনের সময় সীমার পার হলেও বিএটিবির কর্মকর্তারা সচিবলায়ের নির্দেশনার কোন কর্ণপাত না করে আজ ২৪ এপ্রিল তামাকের নতুন মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে। সচিবালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, তিন কার্যদিবসে মৌসুম শুরুর পূর্বে ২২ এপ্রিলের মধ্যে ১২৮ জন মৌসুমী শ্রমিক ও ২০২৩ সালে চাকরিচ্যুত ৫ জন মৌসুমী শ্রমিক ও ২০২৪ সালে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া ১১ জন মৌসুমী শ্রমিকসহ মোট ১৪৪ জন মৌসুমী শ্রমিকদের দাবি মেনে তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
ধর্মঘটে শ্রমিকরা বলেন, প্রতি বছর আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এভাবে আমাদের সাথে বছরের পর বছর প্রতারণা করে যাচ্ছে কোম্পানির কর্মকর্তারা। আমরা খেয়ে আছি নাকি না খেয়ে আছি, কিভাবে বেঁচে আছি সেই খোঁজখবর কখনো নেওয়া হয় না। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো একটা ভালো কোম্পানি, কিন্তু এখানে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের জন্যই আজ আমাদের এই অবস্থা। আমাদের চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় কর্মকর্তারা ইচ্ছামত আমাদের চাকরি থেকে বের করে দেয়।
তারা আরও বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি দীর্ঘ ১৩ বছরের আইনি লড়াই শেষে যখন আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি ঠিক তখনই বিএটিবি’র শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও কোম্পানির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারদের যোগসাজশে পূর্বের ন্যায় এবারও শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। আজকের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে যদি তাদের দাবি না মানা হয় তাহলে শ্রমিকরা তাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে এই ফ্যাক্টরির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরের বিএটির শ্রম আইন লংঘন, শ্রমিক শোষণ,লাইসেন্স না থাকা নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবহিক প্রতিবেদন করেছিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন। এরপর শ্রম মন্ত্রণালশয় সম্প্রতি দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সরকারকে জানানোর জন্য বিএটিকে নির্দেশনা দেয়। কিন্তু শ্রম সচিবের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিটি।