জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে বৈশ্বিক পানি ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা, স্থায়িত্ব ও ন্যায়বিচার রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পানি কনভেনশনের ওয়ার্কিং গ্রুপের ষষ্ঠ যৌথ সভার প্রথম অধিবেশনে বক্তৃতাকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
কনভেনশনের নব-অধিভুক্ত সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের জন্য নদী শুধু নদী নয়- নদীই আমাদের প্রাণ। বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদীবাহিত বদ্বীপ এবং দেশের মোট পৃষ্ঠজলের ৯০ শতাংশেরও বেশি আসে সীমান্তের বাইরে থেকে।
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠনের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতা এখনও একটি প্রধান নীতিগত লক্ষ্য হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের কথা উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের সব নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ বা আইনগত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের এক অনন্য উদাহরণ।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ নদী রক্ষায় বিস্তৃত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে, তবে বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এজন্য সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিল্প ও গৃহস্থালি দূষণ, লবণাক্ততা ও প্রবাহ হ্রাস মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, সরকার দেশজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিরূপণ করছে এবং ইতোমধ্যে দুটি অঞ্চলকে ‘পানি সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে নিরাপদ পানীয় জলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু, রেলপথ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও উপস্থিত ছিলেন।


