ঢাকাবুধবার , ২১ মে ২০২৫

বোরো ধান নিয়ে বোবা কান্না: গাইবান্ধার কৃষকদের অসহায় চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২১, ২০২৫ ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ । ৯৮ জন

গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল ধানের ভালো ফলন দেখে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার হঠাৎ রূপ বদলে সেই হাসি আজ কান্নায় রূপ নিয়েছে। মাঠের পাকা ধান এখন পানির নিচে, উঠানে রাখা ধান গজিয়ে উঠছে গাছ হয়ে, আর কৃষকের মুখে যেন বোবা কান্নার শব্দই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

ভারি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নিচু এলাকার ধানখেত
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জেলার সাতটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ধানখেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক ধান কাটতে পারলেও মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন না। ফলে মাঠে থাকা ধান যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাড়িতে আনা ধানও অঙ্কুরিত হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতির আশঙ্কায় আতঙ্কিত কৃষকরা
দেড় একর জমিতে চাষ করা মিনহাজ মিয়া বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার ধান বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।”
আরেক কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, “লোন কইরা চাষ করছিলাম। কিছু ধান কাটি আনছি, আর তখনই শুরু হইল ঝড়-বৃষ্টি। যেগুলা জমিতে আছে, সেগুলা পানিত তলাই গ্যাছে।”

প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরামর্শ
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, “বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই কেটে ফেলার পরামর্শ আমরা দিচ্ছি। জেলায় মোট ৬৫ শতাংশ ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। আবহাওয়া দু-একদিন ভালো থাকলে ক্ষতির পরিমাণ তেমন বেশি হবে না।”

চাষাবাদের পরিসংখ্যান
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু আবহাওয়ার এই প্রতিকূল অবস্থায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

গাইবান্ধার কৃষকরা আজ এক দুঃসহ বাস্তবতার মুখোমুখি। ফসল ঘরে তোলার আগেই প্রকৃতির রুদ্ররূপ তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। জরুরি সহায়তা ও সরকারি হস্তক্ষেপ না পেলে এই প্রান্তিক কৃষকদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে।