বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন ড. মনজুর আহমেদ বলেছেন, শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে পরিবেশ ও জলবায়ুজনিত প্রভাব নিয়ে কাজ করবে ইসিডি নেটওয়ার্ক। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত শিশুদের উপর বেশি প্রভাব পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন একটা অস্তিত্বের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জীবনে। এসব বিষয়ের করণীয় ব্যাপার নিয়েও যথেষ্ট আকারে আলোচনা হচ্ছে না।
বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের আয়োজনে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মনজুর আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে যে নানা রকম অভিঘাত প্রভাবিত করছে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু এটি শিশুদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী বিশিষ্ট ১২ ব্যক্তিকে নিয়ে জলবায়ু এবং শিশু বিকাশ সম্পর্কিত করণীয় বিষয়ে জাতীয় মাল্টিসেক্টরাল ওয়াকিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, নেটওয়ার্কের একটা ফোকাস থাকতে হবে। তারা কোন বয়সী শিশুদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করবে।
শ্রীলঙ্কার একটি বিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে তিনবার ঘণ্টা বাজানো হয় শিক্ষার্থীদের পানি পান করানোর জন্য। এই চর্চাগুলো আমাদের দেশেও অনুশীলন করতে হবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম. তামিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে যতটা অভিঘাত করবে তার চেয়েও বেশি অভিঘাত করবে একজন শিশুকে। প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিশুর প্রাক শৈশব সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
মীর মাসরুর জামান রনি বলেন, আমাদের সময় শৈশব আনন্দময় শৈশব চাইতাম। এখনকার শৈশব দুর্ভোগমুক্ত শৈশব চাই। আমাদের শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশে প্রধান বাধা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিশুবান্ধব না হওয়া। আমরা বড় হতে হতে এমন দুর্ভোগ জীবনে যুক্ত হয়েছি, এখন আনন্দময় জীবনের বদলে এখন দুর্ভোগ দূর করাটাই এখন জাতির সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যম বিষয়ক উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মীর আত্তাকী মাসরুরুজ্জামান বলেন, জাতীয় সক্ষমতা তৈরি করে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে দাতা নির্ভরতা কমিয়ে আমাদের দেশীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে সুন্দর শিশু বান্ধব দেশ গড়তে হবে।
‘মাল্টি-সেক্টরাল ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ইসিডি’র উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন ড. মনজুর আহমেদ। এছাড়া ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের (বেন) ভাইস-চেয়ার মাহমুদা আখতার। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল নেটওয়ার্ক ফর আর্লি চাইল্ডহুডের (আর্নেক) প্রোগ্রাম অ্যান্ড পার্টনারশিপ স্পেশালিস্ট ড. নীলিমা চোপড়া।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসিডি নেটওয়ার্কের ভাইস- চেয়ারম্যান মাহমুদা আখতার।
বেন’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আইইউবির ফার্মেসি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ স্কুলের ডিন ড. কামরান উল বাসেতের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন— বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের কোষাধ্যক্ষ ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এসএম সাইদুর রহমান মাশরেকী, আইইউবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ও ফোকাল (আইসিসিসিএডি) অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান। এছাড়াও সমষ্টি সংগঠনের সমন্বয়ক জাহিদুল হক খানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সেভ দ্য চিলড্রেনের মোহাম্মদ ওমর ফারুক, আসিফ মঈনুল চৌধুরী, দৈনিক ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার রাবেয়া বেবী, রূপালী বাংলাদেশের সিনিয়র রিপোর্টার স্বপ্না চক্রবর্তী প্রমুখ।