বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট। এই দাবিতে তারা ২২ মে ২০২৫ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
তাদের মূল দাবি হলো, কৃষিভিত্তিক জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা এবং বর্তমান বৈষম্যমূলক উন্নয়ন কাঠামো সংস্কার করে কৃষিবান্ধব বাজেট বাস্তবায়ন। তারা বলছে, জাতীয় বাজেটের ৪০% কৃষিতে বরাদ্দ না দিলে কৃষক, ক্ষেতমজুর, নারী শ্রমজীবীসহ বৃহৎ জনগোষ্ঠী চরম সংকটে পড়বে।
১২ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
১. জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দ কর।
২. কৃষি শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড, রেশন ও স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত কর; ভূমিহীন, খেতমজুর ও বর্গাচাষিদের কৃষি কার্ড দাও।
৩. কৃষি শ্রমিকদের সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা এবং ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু: ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস: ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ৮০০ টাকা নির্ধারণ; পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সরকারি উদ্যোগে কাজের এলাকায় থাকার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা কর। বড় পাথার, হাওর এলাকায় সরকারি উদ্যোগে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা কর।
৪. নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর কর; ইউনিয়ন স্বাস্থকেন্দ্রে এমবিবিএস ডাক্তার, ১০ শয্যার হাসপাতাল, পর্যাপ্ত ওষুধ ও সিজার সুবিধাসহ মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত কর।
৫. বিএডিসিকে সচল কর, সার-বীজ, কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণ ন্যায্যমূল্যে যথাসময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ কর; ভেজাল বীজ, সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও।
৬. কৃষি ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত কর; প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে কৃষি ফসল ক্রয় কর। চলতি মৌসুমে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন ধান খোদ কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় কর।
৭. বন্যা-খরা, নদীভাঙ্গনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খেতমজুরদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত কর।
৮. সরকারি খাসজমি সমবায়ের মাধ্যমে ভূমিহীন খেতমজুরদের মধ্যে বিতরণ (হস্তান্তর অযোগ্য) কর; সকল ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য সরকারি আবাসন নিশ্চিত কর।
৯. দশ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ সুদ ও আসলসহ মওকুফ কর। বিনা সুদে কৃষিঋণ দিতে হবে এবং সার্টিফিকেট মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার কর।
১০. চাল, ডাল, তেল-চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাও: সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও; আর্মি রেটে রেশন দাও।
১১ ব্যাংক-সেটেলমেন্ট, তহশিল ও ভূমি অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ-দুর্নীতি ও দলীয়করণ বন্ধ কর। এনজিও ঋণের অস্বাভাবিক সুদ কমাও, হয়রানি বন্ধ কর।
১২. আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন কর।
সমাবেশের উদ্দেশ্য:
সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, খাদ্য ও চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধির কারণে গ্রামের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কৃষকের উৎপাদিত ধানের দাম কম, অথচ চালের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারের দাম প্রতি কেজি ৮ টাকা থেকে ২৫ টাকায় পৌঁছেছে। সরকারি গুদামে ধান ক্রয় কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাই কৃষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষিখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি আদায়ে এই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।