ঢাকাবুধবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

মোবাইল মেসেজে ধূমপান ছাড়ছেন যক্ষ্মা রোগীরা, কমছে মৃত্যুহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ । ১১৮ জন

যক্ষ্মা (টিবি) রোগীদের ধূমপান ত্যাগে মোবাইল ফোনের এসএমএস অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। মার্কিন মেডিকেল জার্নাল (JAMA)-তে প্রকাশিত ওই গবেষণা বলছে, যেসব যক্ষ্মা রোগী ধূমপান ত্যাগ করেন, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা দ্রুত কাজ করে এবং চিকিৎসাকালীন মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে।

মার্কিন মেডিকেল জার্নাল জামা (JAMA)-তে প্রকাশিত “A mHealth (Mobile Health) Intervention for Smoking Cessation in People with Tuberculosis: A Cluster Randomized Clinical Trial” শীর্ষক এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন হাল ইয়র্ক মেডিকেল স্কুলের পাবলিক হেলথের অধ্যাপক কামরান সিদ্দিকি, আর সহ-গবেষক হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর রুমানা হক।

গবেষণায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে মোবাইল-ভিত্তিক (mHealth) তামাক বিরতি কার্যক্রমের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ঢাকা এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে গবেষণা পরিচালনা করে দেখা যায়, যে সকল যক্ষ্মা রোগীদের অনুপ্রেরণামূলক এবং দিকনির্দেশনা সহায়ক মেসেজ পাঠানো হয়েছে তাদের ধূমপান ত্যাগের হার, প্রচলিত লিখিত তামাকবিরতি উপদেশ প্রাপ্ত রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি।

গবেষণায় মোট ১,০৮০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৭২০ জনকে প্রথম দুই মাস দৈনিক এবং পরবর্তী চার মাসে একবার করে সহায়ক এসএমএস পাঠানো হয়। বাকি ৩৬০ জনকে দেওয়া হয় প্রচলিত লিখিত তামাকবিরতি উপদেশ।

ফলাফলে দেখা গিয়েছে, যারা মেসেজ পেয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় তিন গুণ বেশি রোগী ছয় মাসের জন্য সফলভাবে ধূমপান ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছে। দুই দেশের এম mHealth হেলথ সেবা নেওয়া মোট রোগীর ৪১.৭% ছয় মাস ধূমপানমুক্ত থাকতে পেরেছেন, যেখানে প্রচলিত সেবা নেওয়া রোগীদের মধ্যে এই হার মাত্র ১৫.৩%। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মেসেজ প্রাপ্ত রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার (৩.৫%) প্রচলিত সেবাপ্রাপ্তদের (৭.৫%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

প্রফেসর রুমানা হক বলেন, “যক্ষ্মা রোগীদের ক্ষেত্রে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ধূমপান ত্যাগে অনুপ্রাণিত করা, একটি সাশ্রয়ী এবং কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। সরকার চাইলে এটিকে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।”

প্রফেসর কামরান সিদ্দিকি বলেন, “আমরা জানি ধূমপান ত্যাগ করলে যক্ষ্মা থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। তাই আমরা পরীক্ষা করেছি, উৎসাহমূলক ও সহায়ক বার্তা প্রেরণ করার মাধ্যমে রোগীদের দ্রুত ধূমপান ত্যাগে সাহায্য করা সম্ভব কিনা।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই পদ্ধতি কেবল ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ অন্যান্য তামাকজনিত রোগ প্রতিরোধই করে না, বরং যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুহার কমিয়ে স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসায় জীবন রক্ষা করে। এটি বাস্তবসম্মত এবং সম্পদসীমিত পরিবেশে বিশেষভাবে কার্যকর।”

গবেষণাটি প্রমাণ করে, যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের চিকিৎসায় নিয়মিত মোবাইলভিত্তিক কাউন্সেলিং যুক্ত করা হলে তা ধূমপায়ী রোগীদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কার্যকর হতে পারে।