ঢাকাসোমবার , ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৮, ২০২৫ ১:৪৩ অপরাহ্ণ । ২৮ জন

বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বর্তমানে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিনিয়োগ দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, ঋণঝুঁকি এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সীমিত বিনিয়োগ এবং নীতিগত বাধা দেশকে টেকসই জ্বালানি রূপান্তর থেকে পিছিয়ে রাখছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দ্রুত নীতি পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ছাড়া বাংলাদেশের পরিবেশ ও জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

রাজধানীর বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী বাংলাদেশ এনার্জি কনফারেন্স ২০২৫–এর দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বহুজাতিক ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এনজিও ফোরাম অন এডিবির কো-অর্ডিনেটর শারমিন আক্তার বৃষ্টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এডিবির মোট বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭.৩৪ বিলিয়ন ডলার, যার বড় অংশই গ্যাস-ভিত্তিক খাতে গেছে। ৩৬টি গ্যাস প্রকল্পে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩,৬৫৯ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হলেও, কয়েকটি বড় প্রকল্প জ্বালানি ঘাটতির কারণে চালু করা যায়নি।

রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট এবং রিলায়েন্স মেঘনাঘাট ৭১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র চালু না হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও উচ্চমাত্রার ক্যাপাসিটি চার্জ বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে। এডিবির একপেশে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিনিয়োগ বাংলাদেশের ঋণঝুঁকি ও জলবায়ু বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এডিবি–সমর্থিত পাঁচটি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের জীবনচক্রে মোট কার্বন নিঃসরণ প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন টন। মেঘনা, মেঘনাঘাট ও ভৈরব নদীর তীরে ১৬০ একরের বেশি জমি দখল করার ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা হারানো, বাস্তুচ্যুতি ও সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এডিবি গ্যাস খাতে ৯১ শতাংশের বেশি অর্থায়ন করেছে, তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ মাত্র ৮.৬৬ শতাংশ। প্রতিবেদন ও আলাপচারিতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতি জটিলতা, শুল্ক কাঠামো এবং অদৃশ্য বাধার কারণে সৌরবিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা আল মাহমুদ বলেন, “সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে শক্তিশালী আর্থিক প্রণোদনা ও শুল্ক সহজীকরণ প্রয়োজন।”

এডিবি’র জীবাশ্ম-নির্ভর কৌশল পরিবর্তন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নীতিগত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি রূপান্তর সম্ভব নয়।