ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ১৩% বেড়ে ৪৮৩ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫ ৩:২৪ অপরাহ্ণ । ৩৮ জন

গত নভেম্বর মাসে দেশে মোট ৫৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জন নিহত এবং ১৩১৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬৪ জন নারী এবং ৭১ জন শিশু রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হয়েছে; ২২৭টি দুর্ঘটনায় ১৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া পথচারী ১০৬ জন মারা গেছেন।

নভেম্বর মাসে নৌ ও রেল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানও দুঃখজনক। ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়া ৪৭টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছেন।

আগের মাসের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৪.২২ জন নিহত হন, কিন্তু নভেম্বর মাসে এই সংখ্যা বেড়ে ১৬.১ জন হয়েছে। অর্থাৎ, নভেম্বরে প্রাণহানি বেড়েছে প্রায় ১৩.২২ শতাংশ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, এই প্রতিবেদন তৈরি করতে ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্য ব্যবহার করেছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের তথ্য:

নভেম্বর মাসে দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের মধ্যে: মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন, বাসের যাত্রী ২৪ জন, ট্রাক ও পিকআপ জাতীয় যানবাহনের আরোহী ২২ জন, প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস ১৪ জন, থ্রি-হুইলার ৮৩ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩১ জন এবং রিকশা-বাইসাইকেল ৯ জন।

দুর্ঘটনার ধরন ও স্থান:

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩১টি দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৮২টি গ্রামীণ সড়কে, ৭১টি শহরের সড়কে এবং ৫টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনার ধরন হিসেবে রয়েছে মুখোমুখি সংঘর্ষ ১২২টি, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২৩৭টি, পথচারী চাপা/ধাক্কা দেওয়া ১০৯টি, যানবাহনের পেছনে আঘাত ৫৯টি এবং অন্যান্য কারণে ৭টি দুর্ঘটনা।

অঞ্চলভিত্তিক পরিস্থিতি:

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৪১টি দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম, ৩০টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৪১টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম শেরপুর ও পঞ্চগড় জেলায়, যেখানে ৯টি দুর্ঘটনায় ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

দুর্ঘটনার প্রধান কারণ:

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা এবং শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা। এছাড়া বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও মানার অভাব, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ-এর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশ:

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএ-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের জন্য ট্রাফিক আইন বাধাহীনভাবে প্রয়োগ করতে হবে। মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে, সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করা, টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়ন করা এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে কার্যকর করা।