ঢাকাবুধবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

জলবায়ু বাস্তুচ্যুতিকে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ ৬:১৫ অপরাহ্ণ । ১৬৪ জন

জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতি মোকাবেলায় সরকারের বিদ্যমান উদ্যোগসমূহ অপর্যাপ্ত, বিচ্ছিন্ন ও স্বল্পমেয়াদি। উদ্যোগের বড় অংশই দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ ও অস্থায়ী পুনর্বাসনে সীমাবদ্ধ, পুনর্বাসণের জন্য আবাসন নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হলেও, টেকসই জীবিকা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকে ফলে পুনর্বাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং মানুষ বারবার স্থানচ্যুত হয়। সংকট মোকাবেলায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতিকে জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বাজেটে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, কমিউনিটি-ভিত্তিক টেকসই পুনর্বাসন ও জীবিকাভিত্তিক অভিযোজন কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করাসহ ভবিষ্যৎ ঝুঁকি হ্রাসে টেকসই উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মান করা অতবি জরুরী।

আজ (২৪ ডিসেম্বর) কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে আয়োজিত ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে “অভ্যন্তরীণ জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ও টেকসই পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই সকল দাবিসমূহ তুলে ধরেন।

কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর হেড-ক্লাইমেট চেঞ্জ এম.এ হাসান-এর সঞ্চালনায় ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুজ্জামান, অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ভোলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ মোকাম্মেল হক মিলন, দৈনিক প্রথম আলো-এর জেলা প্র্রতিনিধি নেয়ামত উল্ল্যাহসহ নাগরিক সমাজ, এনজিও , সাংবাদিক, ও বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ও মতামত ব্যক্ত করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুজ্জামান বলেন, তীব্র নদী ভাঙ্গনের কারনে মানুষ বাস্ত্তচ্যুত হচ্ছে, সব হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছে। প্রকৃতির বাহিরে গিয়ে আমরা কিছেই করতে পারবোনা, অভিযোজন করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে।.উন্নত বিশ্ব পরিবেশ দূষণ করছে অথচ তারাই আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার উপদেশ দেয়। আমাদের সুপেয় পানির সংকট নিরসন করতে হবে, স্থানীয় পর্যায়ে বিকল্প আয়ের সুযোগ সুস্টি করতে হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, সরকারি খাস জমিতে বাস্তুচ্যুতদের পূর্ণবাসান করার নীতিমালা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারন খাসজমিগুলো বেশিরভাগই নদীর পাড়ে ও চরাঞ্চলে, মূল ভুখন্ডের নিরাপদ জায়গায় করতে পারলে বাস্তুচ্যুত মানুষ সেখানে বসবাস করতো। আমাদের স্লুইচ গেইটগুলো কাজ না করতে পানি নিষ্কাশন ব্যহত হচ্ছে, খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে ফলে বেড়িবাধের উচ্চতা কমছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর এম.এ. হাসান বলেন, জলবায়ু বাস্তচ্যুতি মোকাবেলায় কেবল জরুরি সহায়তা বা বিচ্ছিন্ন পুনর্বাসন যথেষ্ট নয় প্রয়োজন স্থানীয় পর্যায়ে শক্তিশালী, সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনা কাঠামো, যা বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবন, টেকসই পুনর্বাসন ও ভবিষ্যৎ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নিশ্চিত করবে বাস্তচ্যুত জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে কাছাকাছি কাজ করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কিন্তু তাদের কারিগরি দক্ষতা, অর্থায়ন ও সমন্বয় ক্ষমতা সীমিত। স্থানীয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে পারলে পুনর্বাসন কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই হবে।

প্রথম আলোর জেলা প্র্রতিনিধি নেয়ামত উল্ল্যাহ বলেন, সরকারের পূর্ণবাসন প্রকল্পগুলো এমন জায়গায় করা হয় যেগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, আসলে পূর্ণবাসণ-এর নামে নির্বাসন দেয়া হচ্ছে। কোন কর্মসংস্থান নেই, ঘরগুলোর ভিটি নেই, রকারের বরাদ্দ শুধু শুধু অপচয় হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে প্রকল্প না করে বহুতল ভবন করা যেতে পারে তাহলে জায়গা সাশ্রয় হবে।

উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ভৈৗগলিক কারনে নদী ভাংগনের তীব্র ঝুঁকিতে আমরা আছি, টেকসেই বেড়িবাধ নির্মাণ করতে হবে ও স্থানীয় সম্পদের সুষ্ঠ ব্যাবহারের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে,স্থানীয় যুব সমাজকে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

সাংবাদিক মোঃ মোকাম্মেল হক মিলন বলেন, ভোলাতে অসংখ্য আবাসন প্রকল্প নির্মান করা হলেও তা যথাযথ স্থান নির্বাচন না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এবং চাহিদা যথাযথ ভাবে যাচাই না করে ঘর বন্টন করার কারনে প্রকল্প হতে প্রত্যাশি সাফল্য আসেনি। সাংবাদিক হারুনুর রশীদ শিমুল বলেন. আশ্রায়ন প্র্রকল্পগুলোতে মানুষ থাকেনা কারন, থাকার নুন্যতম পরিবেশ নেই, অল্প বৃষ্টিতে পারপাশ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি মোঃ আব্বাস বলেন, আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরচটকিমারার বাসিন্দা যেখানে সামান্য আবহওয়া খারাপ হলেই ভোলা সদরের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকে, নেই কোনো বেড়িবাঁধ ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা আতংকে থাকি, আমাদের এলাকায় কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, নেই কোন স্বাস্থ্য সেবা। আসমা বেগম বলেন, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর সাথে আমার ঘরটি, আগামী বর্ষায় থাকবে কিনা সন্দেহ আছে, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে কোথায় যাবো আমি জানি না, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান অতীব গুরুত্বপূর্ণ।