রেইকিয়াভিকের বরফঝরা সকালে যখন আইসল্যান্ডের শিশুরা স্কুলে যায়, তারা জানেও না যুদ্ধ কী জিনিস। গ্লোবাল পিস ইনডেক্সের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই দেশটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র। কিন্তু এই তালিকায় প্রতিটি দেশের অবস্থান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় – শান্তি আসলে কতটা নাজুক এবং অসমভাবে বণ্টিত।
ইউরোপের ছোট্ট দেশ আইসল্যান্ডের পাশাপাশি শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া এবং মালয়েশিয়া। এশিয়া থেকে শুধু সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াই এই সম্মানজনক তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। মজার বিষয় হলো, সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষতা এবং পর্তুগালের শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন দেশ দুটিকে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে গেছে।
তালিকার মাঝামাঝি অংশে চোখ বুলালে চমকপ্রদ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। জাপান ১৭তম, অস্ট্রেলিয়া ১৯তম, জার্মানি ২০তম অবস্থানে আছে। ইউরোপের শক্তিশালী দেশ ফ্রান্সের অবস্থান ৮৬তম, যা তার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাকে ইঙ্গিত করে। আর এশিয়ার অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ৮৮তম স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটা মোটামুটি ভালো অবস্থান বলা চলে, যদিও প্রতিবেশী ভারত ১১৬তম স্থানে পড়ে আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার সবচেয়ে এগিয়ে (২৯তম), সৌদি আরব ১০২তম অবস্থানে।
তালিকার নিচের দিকে অবস্থান করছে বিশ্বের কিছু বড় শক্তি। ব্রাজিল ১৩১তম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৩২তম অবস্থানে। লাতিন আমেরিকার মেক্সিকো ১৩৮তম, তুরস্ক ১৩৯তম এবং পাকিস্তান ১৪০তম স্থানে রয়েছে।
তালিকার সবচেয়ে নিচের দিকে যে দেশগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন যুদ্ধ ও সংঘাতের সমার্থক। উত্তর কোরিয়া ১৫২তম, ইসরায়েল ১৫৫তম, রাশিয়া ১৫৭তম, ইউক্রেন ১৫৯তম এবং আফগানিস্তান ১৬০তম অবস্থানে। এই দেশগুলোর অবস্থান থেকে বোঝা যায়, কীভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সশস্ত্র সংঘাত একটি দেশের শান্তির মর্যাদাকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে।
এই তালিকা আমাদের শেখায় যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা সামরিক শক্তি শান্তির গ্যারান্টি দিতে পারে না। সুইজারল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেই শান্তি বজায় রেখেছে। অন্যদিকে, কিছু পরাশক্তি তাদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং আগ্রাসনী নীতির কারণে শান্তির সূচকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
শেষ করব আইসল্যান্ডের একটি গল্প দিয়ে। এই দেশটিতে পুলিশ বাহিনী সাধারণত অস্ত্র বহন করে না। তাদের বিশ্বাস, নাগরিকদের আস্থাই হল সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। হয়তো এটাই আসল শান্তির রহস্য – অস্ত্র নয়, মানুষের মধ্যে আস্থা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলা। বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও এই পাঠ গ্রহণের সময় এসেছে।