ঢাকাশুক্রবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

কিশোর-তরুণদের রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধ্যাদেশ অনুমোদন: সরকারকে অভিনন্দন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২৬, ২০২৫ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ । ৭৬ জন

জনস্বাস্থ্য ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীবৃন্দ। ২০১৩ সালের পরে জনস্বার্থে এ আইনটির সংশোধনী দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিলো। তদুপরি, অনুমোদিত অধ্যাদেশে কিছু ক্ষেত্রে যেমন: খুচরা শলাক বিক্রয় নিষিদ্ধ, তামাক পণ্য বিক্রয়ে লাইসেন্সিং আরোপ এর মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সন্নিবেশিত না করায় কিছুটা আশাহত ও ক্ষুব্ধ প্রুতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে এ ব্যাপারে সরকার সরকার দ্রুততম সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে মনে করেন তারা।

২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ (শুক্রবার) বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস বাংলাদেশ (বিটিসিএ) প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনকৃত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

১. ইমার্জিং টোব্যাকো প্রডাক্টস—যেমন ই-সিগারেট (e-cigarette) বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ENDS), হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট (HTP) ইত্যাদির ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘তামাকজাত দ্রব্য’-এর সংজ্ঞার আওতায় নিকোটিন পাউচ (Nicotine Pouch) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২. পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের পাশাপাশি সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (Designated Smoking Area-DSA) রাখার বিধান সরকারের নির্দেশনার শর্তাধীন করা হয়েছে।পাবলিক প্লেস’ ও ‘পাবলিক পরিবহণ’-এর সংজ্ঞা ও অধিক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

৩. বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের সকল প্রকার বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রসার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

৪. তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে বিদ্যমান ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৭৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস বাংলাদেশ (বিটিসিএ) আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সাগুফতা সুলতানা, স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ এর মডারেটর আমিনুল ইসলাম সুজন, গবেষক আমিনুল ইসলাম বকুল, সাংবাদিক ও গবেষক সুশান্ত সিনহা, সংস্কৃতি কর্মী হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ সৈয়দা অনন্যা রহমান ও ফারহানা জামান লিজা, পরিবেশ উন্নয়ন কর্মী সামিউল হাসান সজীব, সাংবাদিক ইব্রাহীম খলীল ও আবু রায়হান সংবাদ এতে সংহতি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সব ধরনের তামাক পণ্য খুচরা বিক্রয় হয় বিধায় স্বল্প আয়ের মানুষসহ ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের টিফিনের টাকায় তামাকজাত দ্রব্য কিনতে পারে। এছাড়া জর্দা, গুল ও সাদাপাতা খোলা ও খুচরা বিক্রয়ের ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও তামাক কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি রোধে খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা জরুরি। এছাড়া সিগারেটের অবৈধ বানিজ্য, অবৈধ বিজ্ঞাপন, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি ইত্যাদি রোধ করতে বিক্রেতাদের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা জরুরি, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পন্থা। তামাক পণ্য বিক্রেতারা নিবন্ধিত হলে চোরাচালান এবং কর ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে বলে সিগারেট কোম্পানি ও বিক্রেতারা এর বিরোধীতা করে থাকে।

বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, তামাকের আগ্রাসনে প্রতিবছর দেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। ২০২৪ -২৫ অর্থবছরে তামাক সেবনে স্বাস্থ্যক্ষতি, তামাকজনিত পরিবেশ ক্ষতি ও উৎপাদনশীলতার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। অনেক বাধা বিপত্তি স্বত্ত্বেও দেশের কোটি তরুণদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের এ পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক। এজন্য উপদেষ্টাগণ, সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমকে আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বিটিসিএ। তামাকের আগ্রাসন রোধে আগামীতেও সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অটুট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।