ঢাকাশুক্রবার , ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

২০২৫ সালে সেরা রেল ব্যবস্থাসহ শীর্ষ ১০ আফ্রিকান দেশ

বিপ্লব হোসাইন
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ । ১৪৬ জন

আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক সংযোগ এবং আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় রেল যোগাযোগ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন, খনিজ রপ্তানি ও আঞ্চলিক বাণিজ্যে রেল অবকাঠামো আফ্রিকার অনেক দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক দেশ উচ্চ-গতির ট্রেন, স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে এবং আধুনিক স্টেশন নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।

২০২৫ সাল পর্যন্ত উন্নত অবকাঠামো, নির্ভরযোগ্যতা ও কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় আফ্রিকার সেরা রেল ব্যবস্থা থাকা শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

১. দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ও জটিল রেল নেটওয়ার্কের অধিকারী। খনিজ, শিল্পপণ্য ও যাত্রী পরিবহনে রেল ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে। যদিও কিছু পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও চলমান পুনর্বাসন কার্যক্রম ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ দেশটিকে আফ্রিকার শীর্ষ রেল শক্তি হিসেবে ধরে রেখেছে।

২. মরক্কো

মরক্কো আফ্রিকার রেল উদ্ভাবনের অগ্রদূত। দেশটি মহাদেশের প্রথম উচ্চ-গতির রেললাইন “আল বোরাক” চালু করেছে, যা টাঙ্গিয়ার ও কেনিত্রাকে সংযুক্ত করে। বিদ্যুতায়িত ট্র্যাক, আধুনিক স্টেশন ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার মাধ্যমে মরক্কোর রেল ব্যবস্থা যাত্রী সেবায় নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।

৩. মিশর

মিশরের রেল নেটওয়ার্ক আফ্রিকার প্রাচীনতম ও বৃহত্তমগুলোর একটি। সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা উন্নয়ন, আধুনিক ট্রেন সংযোজন এবং উচ্চ-গতির রেল প্রকল্পে বিনিয়োগের ফলে পরিষেবার মান ও নির্ভরযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. সুদান

সুদানের রেল নেটওয়ার্ক আফ্রিকার দীর্ঘতমগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঐতিহাসিকভাবে কৃষি ও বাণিজ্যের প্রধান পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত এই রেল ব্যবস্থা দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও এর কিছু অংশে পুনর্বাসনের প্রয়োজন রয়েছে।

৫. মোজাম্বিক

মোজাম্বিকের রেল ব্যবস্থা আঞ্চলিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে কয়লা ও কৃষিপণ্য পরিবহনে। বেইরা ও মাপুতো করিডোরের মতো প্রধান রেলপথগুলো স্থলবেষ্টিত প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বন্দর সংযোগ নিশ্চিত করে, ফলে মোজাম্বিক দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাবে পরিণত হয়েছে।

৬. তানজানিয়া

তানজানিয়া পূর্ব আফ্রিকার বাণিজ্যে রেল ব্যবস্থার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশটি স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে (SGR) প্রকল্পের মাধ্যমে গতি, নিরাপত্তা ও মালবাহী সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, যা আঞ্চলিক একীকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

৭. আলজেরিয়া

আলজেরিয়া ধারাবাহিকভাবে তার রেল অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ করছে। বিদ্যুতায়িত রেললাইনগুলো শিল্পাঞ্চলকে ভূমধ্যসাগরীয় বন্দরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে যাত্রী ও মালবাহী উভয় পরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে।

৮. গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো

দুর্গম ভূপ্রকৃতি সত্ত্বেও কঙ্গো একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল নেটওয়ার্ক বজায় রেখেছে, যা মূলত খনিজ পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন থাকলেও খনি অঞ্চল ও রপ্তানি পথের মধ্যে রেল সংযোগ দেশটির অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৯. কেনিয়া

কেনিয়ার স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে (SGR) মোম্বাসা ও নাইরোবির মধ্যে যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি বন্দরভিত্তিক লজিস্টিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও ভ্রমণ সময় হ্রাস করে কেনিয়াকে পূর্ব আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

১০. নাইজেরিয়া

নাইজেরিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবুজা-কাদুনা ও লাগোস-ইবাদান রেললাইনের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে রেল খাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও আন্তঃনগর যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রেলের ভূমিকা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৫ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার এসব দেশ রেল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আঞ্চলিক সংযোগ ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আধুনিক রেল ব্যবস্থা শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, বরং বাণিজ্য, শিল্প ও আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।