ঢাকাশনিবার , ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • অন্যান্য

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস আজ

দিবস পালিত হলেও কন্যাশিশুরা এখনো নিরাপদ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ১১, ২০২৫ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ । ১২১ জন

আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি উপলক্ষে নানা আলোচনা, সেমিনার ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- দেশে কন্যাশিশুরা কতটা নিরাপদ?

জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হলো- কন্যাশিশুদের অধিকার রক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, লিঙ্গবৈষম্য দূর করা এবং তাদের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য: “The Girl, I Am, The Change Lead: Girls on the Frontlines of Crisis” – অর্থাৎ ‘আমি সেই মেয়ে, আমি-ই পরিবর্তনের নেতৃত্ব; সংকটে কন্যারা সম্মুখসারিতে।’

২০১১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়, আর ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথমবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। প্রথম বছরের থিম ছিল ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করা’। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের কন্যাশিশুরা এখনো নানা নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার।

সহিংসতার উদ্বেগজনক চিত্র
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসেই কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯৩টি কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০টি ধর্ষণ, ১৩টি ধর্ষণের পর হত্যা, এবং ৮১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বহু কন্যাশিশু পাচার, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্ত ও বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণ বা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে সংখ্যা ছিল ২২৪ জন- অর্থাৎ এক বছরে এই অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ।

পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ২ হাজার ১৫৯টি, যদিও সেখানে কন্যাশিশুর নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মাত্র নয় মাসে ৪৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে।

বিচারহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতা
বিশ্লেষকদের মতে, এই সহিংসতার প্রধান কারণ বিচারহীনতা। অপরাধীরা বারবার আইনের ফাঁকফোকর পেয়ে একই অপরাধে উৎসাহ পাচ্ছে। শিশু সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় নীতিমালা থাকলেও বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল।

শুধু দিবস নয়, প্রয়োজন বাস্তব পরিবর্তন
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কন্যাশিশুর ক্ষমতায়ন নিয়ে কেবল বক্তব্য বা দিবস পালন যথেষ্ট নয়। তাদের প্রকৃত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার, এবং সমাজজুড়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

কারণ, একদিকে রাষ্ট্র কন্যাশিশুর ক্ষমতায়ন ও সম্ভাবনার কথা বলছে, অন্যদিকে প্রতিদিনই পত্রিকার শিরোনামে উঠে আসছে তাদের ওপর ভয়াবহ সহিংসতার খবর।

উৎসবের দিনে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়: নিরাপত্তা ও মর্যাদায় কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎ কোথায়?