ঢাকাবুধবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাচ্চাদের ছুটি কীভাবে কাটানো উচিত

প্রজন্ম-প্রকৃতি প্রশ্নিক
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ । ৯৪ জন

পরীক্ষা শেষ। শিক্ষার্থীরা এখন ছুটিতে-কেউ বাইরে ঘুরছে, কেউ পরিবারের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটাচ্ছে। যারা বাইরে আছে ও পরিবারকে সময় দিচ্ছে, তাদের জন্য হয়তো আলাদা করে কিছু বলার নেই। কিন্তু যারা বাড়িতে বসে আছে, করার মতো কিছু পাচ্ছে না কিংবা শুধু ডিভাইস স্ক্রল করেও বিরক্ত হয়ে পড়ছে-এই লেখা মূলত তাদের জন্য।

ছুটির সময় কীভাবে উপভোগ্য করে তোলা যায়, সে বিষয়ে বলার আগে আমি আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করতে চাই।

শীতকালীন ছুটি শুরু হওয়ার পর আমি বুঝতে পারছিলাম, সারাদিন স্ক্রিনে চোখ রেখে সময় কাটানো আমার জন্য মোটেও ভালো নয়। সৌভাগ্যবশত, আমার মা আমার বড় বোনকে (চাচাতো) আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিউ মার্কেটে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। আমার বোন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রচুর বই পড়তেন এবং জানতেন-আমার জন্য কোন ধরনের বই উপযুক্ত হবে।

তিনি জানতেন আমি বই পড়তে ভালোবাসি। প্রথমে তিনি আমাকে নীলখেত এলাকার বিভিন্ন বইয়ের দোকানে নিয়ে যান, কিন্তু সেখানে ঠিক পছন্দের বই পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর আমরা নিউ মার্কেটে যাই। এটি ছিল সেখানে আমার প্রথম যাওয়া-আর অভিজ্ঞতাটা সত্যিই অসাধারণ। দোকান ছিল অনেক, কিন্তু অতিরিক্ত ভিড় নয়। চারপাশটা ছিল পরিপাটি, আর বইগুলো দেখতে দারুণ লাগছিল।

শেষ পর্যন্ত আমরা একটি দোকান থেকে মোট ছয়টি বই কিনি-হ্যারি পটার সিরিজের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বই, ইনসার্জেন্ট (ডাইভারজেন্ট সিরিজ), দ্য হাঙ্গার গেমস (প্রথম বই), দা ভিঞ্চি কোড, এবং দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস।

আমি ইতোমধ্যে হ্যারি পটার সিরিজের দুটি বই শেষ করেছি এবং এখন ইনসার্জেন্ট পড়া শুরু করেছি।

দোকানের মালিক ছিলেন একজন বেশ আকর্ষণীয় মানুষ। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমাদের নিজের জীবনের গল্প, বই পড়ার অভিজ্ঞতা এবং বই নিয়ে রিভিউ লেখার নানা পরামর্শ দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন। গল্পগুলো ভালো লাগলেও আমার পা বেশ ব্যথা করে যাচ্ছিল। তাই একটু বিশ্রামের জন্য জুতার ফিতা খোলার ভান করে এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলাম-যাতে কিছুটা সময় পাওয়া যায়!

দোকান থেকে বের হওয়ার পর আমার বোন জানালেন, তিনি আগেও সেখানে এসেছিলেন এবং ইচ্ছে করেই আমাকে এই দোকানে নিয়ে এসেছেন-এই অভিজ্ঞতাটা দেওয়ার জন্য। অভিজ্ঞতাটি যেমন আনন্দের ছিল, তেমনি একটু ক্লান্তিকরও।

এরপর আমরা একটি শিল্পকলার দোকানে যাই এবং সেখান থেকে একটি ক্যানভাস ও কিছু আর্ট সামগ্রী কিনি। ছুটির দিনে নতুন কিছু শেখার ও করার অনুপ্রেরণা যেন আরও বেড়ে গেল।

আমি যে প্রথম বইটি শেষ করেছি-হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স-এই বইটি শেষ করে সত্যিই আমার মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমাকে কাঁদতেও হয়েছিল, যদিও আমি সাধারণত সহজে কাঁদি না। গল্পের শুরুতে হ্যারি তার মাগল আত্মীয়দের সঙ্গে থাকে, এরপর হগওয়ার্টস স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডাম্বলডোর ভলডেমর্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ‘অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স’ গঠন করেন, যেখানে ম্যাড-আই মুডির মতো অরররাও যুক্ত হন। গল্প যত এগিয়েছে, আবেগও তত গভীর হয়েছে।

আমার মনে হয়, যারা বই পড়তে ভালোবাসে, তাদের উচিত নিজের পছন্দের বই সংগ্রহ করা ও মন দিয়ে পড়া। আর যারা সৃজনশীল কাজে আগ্রহী, তারা আঁকা, গান, জার্নাল লেখা কিংবা নিজেদের পছন্দের যেকোনো সৃজনশীল কাজে সময় দিতে পারে।

এসব কাজ শুধু শিশুদের ডিভাইসের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি কমায় না, বরং বাস্তব জীবনের সঙ্গে তাদের সংযোগ বাড়ায় এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। পাশাপাশি, সুযোগ থাকলে সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কিংবা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোও ছুটিকে অর্থবহ করে তোলে।

ছুটির দিনগুলো সৃজনশীলভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করুন এবং যতটা সম্ভব ডিভাইস ব্যবহার কমান। নিরাপদে থাকুন-আর ছুটিটা সত্যিই উপভোগ করুন।

লেখক: ঢাকাস্থ এ.জি. চার্চ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।