বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির মধ্যেও স্তন ক্যানসার নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া ক্যানসারের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সচেতনতার অভাব এবং প্রাথমিক লক্ষণ উপেক্ষার কারণে অনেক নারী দেরিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা রোগকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্ক্রিনিং, জেনেটিক পরীক্ষা এবং লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপি ব্যবহারের হার বেড়েছে, তবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে সব নারী সমান সুবিধা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের নারীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষা কম হওয়ায় রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
পরিসংখ্যান
আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, মারা যান ছয় হাজারের বেশি। গড়ে প্রতিদিন ৩৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হন। বিশ্বের সব দেশে নারীদের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ স্তন ক্যানসার। ৪০-৫৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি (৩২.৮ শতাংশ), তবে তরুণী এবং পুরুষের মধ্যেও আক্রান্ত হচ্ছেন।
ঝুঁকি ও কারণ
পরিবারে মায়ের দিকের নিকটাত্মীয়ের ক্যানসার ইতিহাস, দেরিতে মাসিক শুরু বা দেরিতে মেনোপজ, দীর্ঘকাল হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি, স্থূলতা, কম শরীরচর্চা, ধূমপান ও মদ্যপান-এসব ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৫-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিনগত, ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জীবনধারা ও পরিবেশগত কারণগুলো জড়িত।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
ডা. শাহিদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে রোগ পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। তবে দেশে জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও কার্যকর কর্মসূচি নেই। ডা. নওশিন তাসলিমা হোসেন বলেন, নিয়মিত ক্যানসার পরীক্ষা ও সময়মতো চিকিৎসা জীবন রক্ষা করতে পারে। ২০-৩০ বছর বয়স থেকে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা শুরু করা এবং ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারীদের প্রতি বছর পরীক্ষা ও ম্যামোগ্রাফি করানো জরুরি।
ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. সৈয়দ হুমায়ুন কবির বলেন, “সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, তবে রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে।” স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন যোগ করেছেন, “স্ক্রিনিং না হওয়ায় অনেক রোগী শুরুতেই দেরিতে শনাক্ত হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে জরুরি যন্ত্র কার্যকরভাবে কাজ না করায় রোগীরা ব্যয়বহুল বেসরকারি চিকিৎসা বা বিদেশে যাচ্ছেন। দেশেই যথাযথ ব্যবস্থা থাকলে এ অর্থ সাশ্রয় হতো।”
বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত পরীক্ষা, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি-সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ও মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।


