ঢাকাশনিবার , ২ আগস্ট ২০২৫

দৃষ্টিশক্তি এবং শিশুর জীবন বাঁচাতে ভিটামিন-এ

প্রফেসর ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লা
আগস্ট ২, ২০২৫ ১২:২৬ অপরাহ্ণ । ১৭৮ জন

ভিটামিন ‘এ’—একটি ছোট্ট নাম, কিন্তু শিশুর সুস্থ জীবন ও দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য উপাদান। এটি মানবদেহে তৈরি হয় না, তাই খাদ্য থেকেই এ উপাদান আমাদের পেতে হয়। বিশেষ করে শিশুর জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে শিশু অন্ধত্বের শিকার হতে পারে, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।

ভিটামিন ‘এ’ কি?
ভিটামিন ‘এ’ দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এক উপাদান যা বিভিন্ন প্রকার খাদ্য থেকে আমরা পেয়ে থাকি। এটি মানবদেহে তৈরি হয় না; এটা চর্বিতে দ্রবীভূত গ্রুপের একটা ভিটামিন যা খাবারে একটু বেশি তেল থাকলে রক্তে ভালো শোষিত হয়।

কোথায় কোথায় পাওয়া যায়
প্রথমেই বলা যাক মায়ের বুকের দুধের কথা। মা যদি তার শিশুকে জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ দেন তাহলে এ বয়সে শিশুর শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি হবে না।

বিভিন্ন প্রকার প্রাণিজ খাবার যেমন ডিম, মাছ (মলা, ঢেলা, ইত্যাদি মাছ), মাংস, কলিজা, দুধ ও দুধজাত খাদ্য যেমন: ঘি, ছানা, মাখন, পনির ইত্যাদিতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। এর বাইরে স্বল্প মূল্যের সবুজ তাজা শাক-সবজি। যেমন: পুঁইশাক, পালং শাক, রঙিন শাক সবজি, লাল শাক, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, রঙিন ফল, পাকা পেঁপে, আম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।

শিশুর শরীরে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতির কারণ কি কি?
১. উপরোল্লিখিত ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার কয়েক সপ্তাহ যাবৎ না খেলে।
২. শিশুর খাবারে তেল এবং আমিষের পরিমাণ অপর্যাপ্ত থাকলে, ‘এ’ ভিটামিনের শোষণ রক্তে কম হলে
৩. খাবার ও শাকসবজি অতিরিক্ত জ্বালে রান্না করলে, ফ্রিজে রাখলে এবং টিনজাত করলে ভিটামিন ‘এ’ কমে যায়।
৪. এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমন, লিভার এবং অগ্ন্যাশয়ের জটিলতা, রক্তশূন্যতা ইত্যাদিও ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতির কারণ।

ভিটামিন ‘এ’ কি কাজ করে?
১. চোখকে সুস্থ রাখে, সতেজ রাখে এবং দৃষ্টি শক্তির জন্যে যে সমস্ত রঞ্জক রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয় সেগুলো তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে।
২. শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. শরীরের বিভিন্ন কোষের বৃদ্ধি এবং তাদের স্থিতিশীলতাসহ কার্যকারিতা রক্ষা করে।

অভাব হলে কি হয়?
১. রাতকানা বা রাতে কম দেখা এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন প্রকার প্রদাহ ও সংক্রমণজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে।
৩. শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধি কমতে পারে।

কি করে বুঝবেন ঘাটতি হয়েছে
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি এবং ঘাটতিজনিত সমস্যা কিন্তু হঠাৎ করে আসে না, খুব ধীরে ধীরে হয়। প্রথম উপসর্গ দেখা যায় ‘রাত কানা’ বা রাতে কম দেখা। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে চোখের পানি শুকিয়ে যায় এবং চোখের পর্দা/চোখের মণি ইত্যাদি শুকনো হয়ে যায়। তাতে এ অবস্থায় শিশুর রোগ বা আলোতে তাকাতে অসুবিধা হয় বলে চোখ বন্ধ করে রাখে। একে ‘ফটোফোবিয়া’ বলে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চোখের আরও অবনতি হয়ে ‘ঘা’ হয়ে যায় এবং হতভাগ্য শিশুটি পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়।

এ ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতিতে চামড়া খসখসে হয়ে যায়। শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ঘন ঘন বিভিন্ন প্রকার ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।

ঘাটতি হলে কি করতে হবে?
প্রথমে নিকটন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রথম পদক্ষেপই হবে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো এবং ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পরামর্শ।

ঘাটতি প্রতিরোধের উপায়?
যদি প্রতিটি শিশু জন্মের পর পরই শালদুধ খায় এবং প্রথম ছয় মাস শুধু মাত্র মায়ের দুধ পায় তবে ওই শিশুদের ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি হয় না এবং তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন যকৃত, কিডনী এবং কোষে এ ভিটামিন মজুত থাকে। এরপর ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে শিশুর এ মজুদাবস্থা সন্তোষজনক অবস্থায় উপনিত হয় এবং ঘাটতির ভয় থাকে না।

আমাদের চারপাশে ভিটামিন ‘এ’-এর স্বল্পতা নেই ঠিকই কিন্তু মানুষের শরীরে এর স্বল্পতা আছে। শুধুমাত্র সচেতনতা, পুষ্টি সম্পর্কে বাবা মাকে জ্ঞান দেয়া এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ এর মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ পরিবেশ থেকে শিশুর শরীরে পৌছাতে পারলেই এ অভিশাপ থেকে মুক্তি সম্ভব।

শিশুর দৃষ্টিশক্তি হারানো একটা অভিশাপ। এটা আমার আপনার শিশুর হতে পারে। এ অভিশাপের হাত থেকে আমাদের শিশুদেরকে বাঁচাতে হবে।

ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ডোজ
শিশুর ৬ মাস বয়স থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস পর পর ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। ডোজঃ ক) ৬-১২ মাস: ১ লক্ষ ইউনিট, খ) ১২-৬০ মাস: ২ লক্ষ ইউনিট।

নোট: শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যপক ডা: মো: আবিদ হোসেন মোল্লার লিখিত ‘শিশু স্বাস্থ্যের খুঁটিনাটি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর অনুমতিক্রমে।