ঢাকাশনিবার , ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

গাজায় ঝড় ‘বায়রন’: বন্যা ও শীতে প্রাণ গেল অন্তত ১৪ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ । ৩৭ জন

শীতকালীন ঝড় ‘বায়রন’-এর প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিপাত ও তীব্র ঠান্ডায় গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় শত শত তাঁবু তলিয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছেন লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিপাতে গাজার একাধিক আশ্রয়শিবির প্লাবিত হয়। এতে ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে পানিবন্দি একটি আশ্রয়শিবিরে রাহাফ আবু জাজার নামে আট মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, বৃষ্টির পানি ও প্রবল ঠান্ডার কারণেই শিশুটি মারা গেছে।

এছাড়া শুক্রবার হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে শিশু তাইম আল-খাজা এবং একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সঙ্গে থাকা ৯ বছর বয়সী হাদিল হামদান তীব্র শীতে প্রাণ হারায়।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝড় ‘বায়রন’ আশ্রয়কেন্দ্র ও ঘরবাড়িকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেসব স্থাপনা ইতোমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেগুলোর অনেকগুলো ধসে পড়েছে। গাজা শহরের বেইত লাহিয়ায় একটি ভবন ধসে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে রেমাল এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে বড় দেয়াল ধসে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারী বৃষ্টিপাতে শত শত আশ্রয়শিবির প্লাবিত হয়েছে এবং মাঝারি বৃষ্টিও দ্রুত প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, আগামী কয়েক ঘণ্টা এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।

আইওএম জানায়, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজায় ১০ লাখের বেশি আশ্রয় সামগ্রী পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে জলরোধী তাঁবু, তাপীয় কম্বল, ঘুমানোর মাদুর ও টারপলিন রয়েছে। তবে এসব সরঞ্জাম দীর্ঘস্থায়ী বন্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয় বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, “গাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতি ও ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ঝড় আঘাত হানার পর পরিবারগুলো তাদের সামান্য যা আছে তা দিয়েই সন্তানদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এই কঠিন সময়ে জরুরি সরঞ্জাম ও খাদ্য সহায়তা দ্রুত পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি।”

প্যালেস্টাইন হাউজিং কাউন্সিলের জরুরি ও ত্রাণ দলের প্রধান হাইথাম আকেল জানান, ব্যাপক বন্যায় ইতোমধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর ক্ষতি আরও বেড়েছে। বালির বস্তা দিয়ে নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হলেও জীর্ণ তাঁবুগুলো দিয়ে পানি ঢুকে বহু মানুষের বিছানা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে ফিলিস্তিনি মেডিকেল রিলিফ সোসাইটি জানিয়েছে, বৃষ্টিতে তাদের অন্তত চারটি মেডিকেল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে। এতে চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র: আলজাজিরা, নিউ আরব