ঢাকাশনিবার , ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

জলবায়ু ঝুঁকির মুখে অস্ট্রেলিয়া, অভিযোজন বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৬, ২০২৫ ১:৫৫ অপরাহ্ণ । ৬৫ জন

অস্ট্রেলিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি দ্রুত বেড়ে চলেছে, কিন্তু সেই ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অভিযোজন বিনিয়োগ গুরুতরভাবে পিছিয়ে আছে-এমন সুনির্দিষ্ট ও কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে অ্যাকচুয়ারিজ ইনস্টিটিউট। সংস্থাটি বলছে, এখনই নীতি বদলে বড় পরিসরে বিনিয়োগ না বাড়াতে পারলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের অর্থনৈতিক আঘাত কয়েক দশকের মধ্যেই দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

‘মোবিলাইজিং ইনভেস্টমেন্ট ফর ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে প্রায় ৩৮ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতি করছে। ২০৬০ সালের মধ্যে এই ক্ষতি ৭৩ বিলিয়নে পৌঁছানোর রূপরেখা তুলে ধরে ইনস্টিটিউট বলছে, এ প্রবণতা বদলাতে না পারলে দেশের অবকাঠামো, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি এবং বীমা খাত দীর্ঘমেয়াদি চাপে পড়বে। ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়, ব্যাপক বন্যা, রেকর্ডভাঙা দাবানল এবং তীব্র ঝড়ো হাওয়া এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব চিত্র; এর প্রতিটি আঘাতই অর্থনীতিতে নতুন ক্ষত তৈরি করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোজন সংক্রান্ত বিনিয়োগ পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে নীতিগত দুর্বলতা ও ভুল কাঠামো। প্রচলিত কস্ট-বেনিফিট বিশ্লেষণ দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি হ্রাসের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত ও নিরাপত্তা প্রকল্প কাগজে অগ্রাধিকার হারায়। এর ফলে উপকূলরক্ষা, বন্যা প্রতিরক্ষা, অগ্নিনিরাপত্তা অবকাঠামো, ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় পুনর্গঠন- এসব দীর্ঘমেয়াদি সাশ্রয়ী বিনিয়োগ পিছিয়ে পড়ছে, যদিও এগুলো বাস্তবে বিপুল ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হতে পারে।

বীমা খাতও এই বিনিয়োগ ঘাটতির প্রভাব সরাসরি সামলাচ্ছে। জলবায়ুজনিত ঝুঁকি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকার বীমা প্রিমিয়াম দ্রুত বাড়ছে; কিছু অঞ্চলে আবার বীমা পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। অ্যাকচুয়ারিজ ইনস্টিটিউটের মতে, অভিযোজন বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে বীমা বাজার আরও অস্থির হয়ে পড়বে, যা অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক এবং টেইলর ফ্রাই-এর প্রিন্সিপাল অ্যাকচুয়ারি রমোনা মাইরিকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ব্যয় এখন দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর স্থায়ী বোঝা তৈরি করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, অস্ট্রেলিয়া যে জলবায়ু ঝুঁকির মুখোমুখি, তার তুলনায় অভিযোজন বিনিয়োগ বর্তমানে অপর্যাপ্ত ও অসম্পূর্ণ এবং এই ঘাটতি ভবিষ্যতে আরও বেশি ব্যয় এনে দেবে। তার মতে, অভিযোজন বিনিয়োগকে এখনই অতিরিক্ত খরচ নয় বরং ক্ষতি কমানোর অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্লাইমেট রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ও ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান ইতোমধ্যেই দেশের জলবায়ু ঝুঁকির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু সেই বিশ্লেষণগুলিকে বাস্তব কর্মপরিকল্পনা, কার্যকর অর্থায়ন এবং শক্তিশালী সহযোগিতা কাঠামোর মাধ্যমে বিনিয়োগে রূপান্তর করতে হবে- তা না হলে ঝুঁকি কমবে না, বরং আরও বিস্তৃত হবে। দেশকে এখন জলবায়ু ঝুঁকি বিবেচনায় অবকাঠামো উন্নয়ন, মানববসতি পরিকল্পনা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও শহর উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে তুলে ধরেছে যে জলবায়ু অভিযোজন আর ভবিষ্যতের প্রশ্ন নয়; এটি বর্তমানের অর্থনৈতিক বাস্তবতা। আজকের দেরি ভবিষ্যতের ব্যয়কে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। প্রতিটি বছর যে ক্ষতি বাড়ছে, তা অভিযোজনমূলক বিনিয়োগে প্রতিরোধ করা যেত- যদি সঠিক নীতি, দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা থাকত। অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন জরুরি প্রয়োজন সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক দূরদৃষ্টি, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। (এশিয়া ইন্স্যুরেন্স রিভিউ)