ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি পূরণে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাই ভরসা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১১, ২০২৫ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ । ৮৮ জন

বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার সাহায্যে তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করছেন। ছোটখাটো অসুস্থতা থেকে শুরু করে গুরুতর রোগ পর্যন্ত এই চিকিৎসা প্রায়শই মানুষের প্রথম বা একমাত্র ভরসা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্যার ৪০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ নিয়মিতভাবে ঐতিহ্যবাহী বা পরিপূরক চিকিৎসা ব্যবহার করেন। এই প্রবণতা শুধু স্বাস্থ্যসেবা পূরণ করছে না, বরং মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক সুস্থতাকে সমন্বিতভাবে সমর্থন করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন সেন্টারের পরিচালক শ্যামা কুরুভিলা বলেন, বিশ্বের অর্ধেক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এখনও পুরোপুরি সহজলভ্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষের কাছে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাই সবচেয়ে নিকটতম বা একমাত্র ভরসা।

কুরুভিলা আরও বলেন, অনেকের কাছে এই চিকিৎসা শুধু বাধ্যতামূলক নয়-এটি পছন্দেরও বিষয়। কারণ এটি ব্যক্তিগতকৃত, সামগ্রিক এবং সংস্কৃতিভিত্তিক। নির্দিষ্ট রোগের লক্ষণ চিকিৎসার বাইরে গিয়ে এটি শরীর, মন এবং পরিবেশ-এই তিনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্ব দেয়।

ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা কীভাবে কাজ করে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর ব্যাখ্যায়, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা হলো ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রজন্ম ধরে চলে আসা জ্ঞানের সমন্বয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আগেই এসব পদ্ধতি নানা সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেছিল। এতে প্রকৃতি-ভিত্তিক ভেষজ প্রতিকার, সমন্বিত ও সামগ্রিক যত্ন এবং রোগীর ব্যক্তিগত চাহিদা অনুসারে চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হয়।

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, স্ট্রেস এবং অর্থবহ চিকিৎসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিস্তৃত ব্যবহার সত্ত্বেও, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা তহবিলের এক শতাংশেরও কম এখনো এই খাতে ব্যয় হয়।

ডিসেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্লোবাল সামিট
ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর দ্বিতীয় গ্লোবাল সামিট আগামী ১৭–১৯ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে ও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, চিকিৎসা-অনুশীলনকারী, বিজ্ঞানী ও আদিবাসী নেতারা এতে অংশ নেবেন।

সম্মেলনে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা কৌশল বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। লক্ষ্য হলো-প্রমাণ-ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী ও পরিপূরক চিকিৎসাকে বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করা, মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানো।

বিশ্বব্যাপী প্রথম ডিজিটাল লাইব্রেরি
এর পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমবারের মতো চালু করছে গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন লাইব্রেরি। এটি হবে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে থাকবে- ১৬ লাখেরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা নথি, একটি বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ডেটা নেটওয়ার্ক, আদিবাসী জ্ঞান, জীববৈচিত্র্য ও স্বাস্থ্যসম্পর্কিত কাঠামোসহ আরও নানা তথ্যসূত্র।

কুরুভিলা বলেন, “এই বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা মানুষের সুস্থতা ও পৃথিবীর কল্যাণে আরও বড় অবদান রাখতে পারে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই উদ্যোগ এবং সামিটের মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা কেবল অতীতের উত্তরাধিকার নয়, বরং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। মানুষের স্বাস্থ্য, মানসিক সুস্থতা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

তথ্যসুত্র: ইউনাইটেড নেশনস