ঢাকারবিবার , ৯ নভেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে ধস ভারতীয় চিংড়ি রফতানিতে, বিপাকে লাখো চাষি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ৯, ২০২৫ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ । ৬২ জন

বিশ্বের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতের চিংড়ি রফতানি খাতে নেমে এসেছে ধস। ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ভারতীয় চিংড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশটির চাষিরা।

পশ্চিমবঙ্গের নন্দিগ্রামের চিংড়ি চাষি বুদ্ধদেব প্রধান বলেন, “চিংড়ির দরপতন আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। চেষ্টা করছি, যে তিন লাখ রুপি বিনিয়োগ করেছি, সেটি তুলে আনতে পারি কি না।” প্রথম দফায় ক্ষতির পর তিনি দ্বিতীয় দফা চাষ শুরু করেছেন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, যদিও এতে রয়েছে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি।

ভারত বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশ, ইকুয়েডরের পরেই তাদের অবস্থান। গত অর্থবছরের শেষে (মার্চ পর্যন্ত) দেশটি ৫ বিলিয়ন ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রফতানি করেছে, যার ৪৮ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সর্বশেষ অর্থবছরে ভারত প্রায় ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন টন চিংড়ি রফতানি করেছে, যার বেশিরভাগই ছিল ভান্নামি বা সাদাপায়ের চিংড়ি।

চিংড়ি চাষ প্রধানত হয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, তামিলনাড়ু, গোয়া, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও কেরেলায়। এই খাতে কাজ করেন প্রায় ১ কোটি মানুষ।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় চিংড়ির ওপর প্রথমবারের মতো শুল্ক আরোপ করেন। এরপরই দেশটিতে চিংড়ির দাম প্রতি কেজি ৩০০ রুপি থেকে কমে ২৩০ রুপিতে নেমে আসে, যেখানে উৎপাদন খরচই ২৭৫ রুপি। বর্তমানে ভারতীয় চিংড়ির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ।

এই শুল্কের প্রভাবে অনেক চাষি চিংড়ির বীজ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। সর্বভারতীয় চিংড়ি হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কুমার ইয়েল্লানেকি জানান, “নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্যাচারির ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। অনেক হ্যাচারি ইতোমধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।”

ভারতের হ্যাচারিগুলো বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি বীজ পোনা উৎপন্ন করে। কিন্তু বাজারে চাহিদা না থাকায় গত তিন-চার মাসে ৮০০ কোটি বীজ ফেলে দিতে হয়েছে। ইয়েল্লানেকি সতর্ক করে বলেন, “পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তাহলে হ্যাচারি মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন মূলত ইকুয়েডর থেকে চিংড়ি আমদানি করছে, যা তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ ও সাশ্রয়ী। ফলে ভারতীয় চিংড়ির বাজার হারানোর আশঙ্কা আরও বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে দেশটির চিংড়ি শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।