তিস্তা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার কমে গেলেও লালমনিরহাটের চরাঞ্চল ও তীরবর্তী এলাকায় বন্যার প্রভাব এখনও স্পষ্ট। জেলার পাঁচ উপজেলার অন্তত ২০টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার প্রান্তিক চাষি ও বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। হাঁটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে অনেক বাড়িঘর, রাস্তা ও ফসলি জমি। ক্ষতির মুখে পড়েছে আমন ধান, মাছের ঘের এবং গবাদিপশু।
গত শনিবার বিকেল থেকে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে ছেড়ে দেওয়া পানির ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়তে থাকে। রোববার দুপুরে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সোমবার দুপুরে পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
চরাঞ্চলে পানিবন্দি পরিবার, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
তিস্তার পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে নৌকা ও ভেলা।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহাবুব আলী বলেন, “উজান থেকে পানি এসে আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, অনেকেই ঘরছাড়া হয়েছেন।”
একই এলাকার চরবাসিন্দা মজিবর মিয়া বলেন, “পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে এবার বড় বন্যার আশঙ্কা করছি। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের জমি ও পুকুর।”
আতঙ্কে নদী তীরবর্তী মানুষ
তিস্তা ব্যারাজ এলাকার বাসিন্দা আলী মিয়া বলেন, “আমরা নদীপাড়ের মানুষ সব সময়ই আতঙ্কে থাকি। কখন গজলডোবার গেট খুলে ভারত আমাদের ভাসিয়ে দেবে, তার ঠিক নেই। আমাদের বন্যা হয় ভারতের উজান থেকে ছেড়ে দেওয়া পানির কারণেই।”
প্রশাসনের সতর্কতা ও প্রস্তুতি
পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী। তিনি বলেন, “নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
পাউবোর লালমনিরহাট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, “উজান থেকে পানি আসার কারণে হঠাৎ করে তিস্তার পানি বেড়েছিল। আপাতত কিছুটা কমেছে। তবে নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।”
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, “নদী তীরবর্তী এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় শুকনো খাবার ও ঢেউটিনসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।”
ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্বেগ
চরাঞ্চলের আমন ক্ষেত ও পাটের জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বড় ধরনের ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া পরিবারগুলোর জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের তাগিদও আসছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, তিস্তা নিয়ন্ত্রণে যৌথ উদ্যোগ না নেওয়া হলে প্রতি বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পর্যায়েও এই নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ে কার্যকর আলোচনা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।


