তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত নীতিনির্ধারণ নিশ্চিত করাই জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার প্রথম পদক্ষে বলে মন্তব্য করেছেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী তামাক কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং জনস্বার্থ কখনো এক হতে পারে না। সরকারকে তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে জনস্বাস্থ্যবান্ধব নীতিনির্ধারণে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই’২৫) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও আর্টিকেল ৫.৩ প্রতিপালনে সরকারের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কার্যক্রম আসলে জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করার কৌশল মাত্র। তিনি বলেন, এফসিটিসি’র উদ্দেশ্য হচ্ছে, তামাক ব্যবহারের হার হ্রাস করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা, তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে সরকারি নীতিমালা সুরক্ষিত রাখা।”
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ড. মো. খলিলুল্লাহ, ৭১ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং গেস্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র সদস্য ডা. শহিদুল আলম।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “তামাক কোম্পানির কখনোই জনস্বাস্থ্যবান্ধব হতে পারে না। তামাক শিল্পের প্রভাবমুক্ত নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে এই অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, “অন্য দেশে যেমন ফিলিপাইন, উরুগুয়ে বা যুক্তরাজ্যে আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে যে উদাহরণ স্থাপন হয়েছে, বাংলাদেশকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে।”
ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগে তামাক কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন। আর্টিকেল অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, বধিমালা বা নীতি প্রনয়নের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানি বা তাদের সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের প্রস্তাব, মতামত বা অংশ্যগ্রহণযোগ্য নয়।
ডা. শহিদুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর শক্তিশালীকরণে জন্য বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে যেমন সাধুবাদ পাবার যোগ্য তেমনি সর্বশেষ উপাদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তামাক কোম্পানীর মতামত গ্রহনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জ।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা মিথ্যা প্রচার, লবিং ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে আইন দুর্বল করার চেষ্টা চালায়। অথচ এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সম্পর্ক সীমিত রাখতে নির্দেশনা দেয়।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি প্রফেসর ড. গোলাম রহমান সভাপতিত্বে সেমিনারের স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের যেকোনো যোগাযোগ জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি আইন সংস্কারের সময় তামাক কোম্পানির স্বার্থ নয়, জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি, বিএনপি’র নির্বাচনি ইস্তেহারে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে আমলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানায় আলোচকরা।


