পঞ্চগড়ে টানা চারদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা হিমশীতল বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে এ জেলায় তাপমাত্রা ৯ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করছে। এতে শীতের প্রকোপ বেড়ে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৭ শতাংশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, কয়েকদিন ধরে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় উত্তরের হিমেল বাতাস ও কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে হালকা কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত অনুভূত হয়। রাতভর হালকা থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে এলাকা। ফলে কয়েকদিন পর পরই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে রেকর্ড হচ্ছে।
শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালক এবং কৃষিশ্রমিকরা সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কনকনে শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চাইছেন না, ফলে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের। সকালবেলা ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে মানুষ গরম কাপড় পরে বের হচ্ছেন, অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
শীতের প্রভাবে স্বাস্থ্যখাতেও চাপ বেড়েছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেককে মেঝে ও বারান্দায় থাকতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, পঞ্চগড়ে অন্যান্য এলাকার তুলনায় শীতের অনুভূতি আগেই শুরু হয়। এ কারণে শীতের শুরুতেই শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৬৪০টি কম্বল ক্রয় করে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক বা দুইটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তাই শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


