দেশজুড়ে লাগামহীন বাড়িভাড়া এখন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে সংকটে ফেলেছে। আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ভাড়ায় চলে যাওয়ায় অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের জন্য। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের অভিযোগ-ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে নিয়মিত, কিন্তু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না সেই অনুপাতে।
রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর বিভিন্ন ভাড়া-বোর্ড, রিয়েল এস্টেট সংশ্লিষ্ট তথ্য এবং বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বর্তমানে অনেক পরিবার মাসিক আয়ের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করছেন শুধুমাত্র বাসা ভাড়ার পেছনে। এমনকি কিছু নিম্ন আয়ের পরিবার আয়ের অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় করছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই রাখতে।
ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ, বাড়ির মালিকদের একতরফা সিদ্ধান্তে প্রায়ই বাড়ানো হয় ভাড়া-কখনো উন্নয়ন বাবদ, কখনো বাজারদরের অজুহাতে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব বাড়তি ভাড়া যৌক্তিকতার বাইরে বলে মনে করছেন তারা।
অথচ ভাড়ানিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় কোনো মানদণ্ড ছাড়াই বাড়ছে ভাড়া। ফলে পরিবারগুলোকে খাবার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াতের খরচ কমিয়ে চলতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর পরিকল্পনার অভাব, আবাসন সংকট, সরকারি তদারকির ঘাটতি এবং জনসংখ্যার চাপ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাদের মতে, কার্যকর ভাড়ানিয়ন্ত্রণ নীতিমালা বাস্তবায়ন, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সুলভ আবাসন প্রকল্প এবং শহরে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকলে ভাড়ার এই অস্বাভাবিক চাপ কমানো সম্ভব নয়।
এদিকে বাড়িভাড়ার এই চাপ দীর্ঘমেয়াদে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সতর্ক করে বলেছেন, আয়ের সিংহভাগ ভাড়ায় ব্যয় হওয়ায় সঞ্চয় শূন্যের কোটায় নেমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সংকেত।


