রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠপর্যায়ে জোরালো টিকাদান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, অ্যানথ্রাক্স (বাংলায় ‘তড়কা’) একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। এটি পশু থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে অসুস্থ পশু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কসাইখানাগুলোতে মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
রংপুর ও গাইবান্ধাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুই জেলায় গরুতে ব্যাপক হারে টিকা প্রয়োগ চলছে। প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান এলআরআই ৩০ লাখ টিকা সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২০ লাখ টিকা রংপুর ও গাইবান্ধায় পাঠানো হবে।
রংপুর জেলার আটটি উপজেলায় এক লাখ ৬৭ হাজার গরুকে অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া হয়েছে। কসাইখানাগুলোতে পশু স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রয়েছে ৩৬টি মেডিকেল টিম। মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও কাউনিয়ায় টিকাদান কাজের জন্য ৩২টি আলাদা টিম কাজ করছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় মৃত পশু মাটিচাপা দেওয়া, লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একটি ঘটনায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
সংক্রমণের উৎস শনাক্ত করতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল রংপুর ও গাইবান্ধা পরিদর্শন করেছে। এ পর্যন্ত ১১টি রক্ত নমুনা নেগেটিভ হলেও ১১টি মাংস নমুনার মধ্যে ১০টিতে অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ পাওয়া গেছে।
‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যৌথভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জনগণকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে, অসুস্থ পশু কেউ যেন জবাই না করে। মৃত পশু খোলা জায়গা বা পানিতে ফেলা যাবে না; সেগুলো গভীরভাবে মাটিচাপা দিতে হবে। যেকোনো অসুস্থ পশুর ক্ষেত্রে স্থানীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ অফিসে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।


