ঢাকাবুধবার , ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • অন্যান্য

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিড়ে শীর্ষে ভারত, বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম

রঞ্জন কুমার দে
অক্টোবর ১৫, ২০২৫ ১২:২৩ অপরাহ্ণ । ১০০ জন

বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণরা প্রতিবছর ছুটে আসে যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওপেন ডোরস (Open Doors) প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার মধ্যে ভারত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এসেছে ভারত থেকে—মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬০২ জন। এর মাধ্যমে ভারত চীনের দীর্ঘদিনের আধিপত্য ভেঙে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৮ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানমুখী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তারা প্রধানত ইঞ্জিনিয়ারিং, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে পড়াশোনা করে থাকে।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, যেখান থেকে ৪৩ হাজার ১৪৯ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছে। প্রতিবেশী কানাডা থেকেও ২৮ হাজার ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী সেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। এ ছাড়া তাইওয়ান থেকে ২৩ হাজার ১৫৭ জন, ভিয়েতনাম থেকে ২২ হাজার ৬৬ জন, নাইজেরিয়া থেকে ২০ হাজার ২৯ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত রয়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় অষ্টম, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১৭ হাজার ৯৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে তারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ ও গবেষণার সুযোগ, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষকদের পরামর্শ, এবং কর্মজীবনে বৈশ্বিক সুযোগের সম্ভাবনাই এই আগ্রহের মূল কারণ বলে শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করেন।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল ও মেক্সিকো যথাক্রমে নবম ও একাদশ স্থানে রয়েছে। ব্রাজিল থেকে ১৬ হাজার ৮৭৭ জন এবং মেক্সিকো থেকে ১৫ হাজার ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপাল ১৬ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে, যা দেশটির জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।

তালিকার পরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব (১৪ হাজার ৮২৮ জন), জাপান (১৩ হাজার ৯৫৯ জন), ইরান (১২ হাজার ৪৩০ জন) এবং পাকিস্তান (১০ হাজার ৯৮৮ জন) রয়েছে। এই তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণানির্ভর এবং বাস্তবমুখী পাঠ্যক্রমের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজের সুযোগ, এবং বহুজাতিক পরিবেশে শেখার অভিজ্ঞতা তাদেরকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণকে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসে, তারা শিক্ষা, প্রযুক্তি, ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।