ঢাকারবিবার , ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভরা মৌসুমেও আত্রাইয়ে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ ১১:০১ পূর্বাহ্ণ । ২২ জন

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম শুঁটকির গ্রাম হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এখানকার দেশীয় ছোট মাছের শুঁটকি প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ায় দেশজুড়ে কদর রয়েছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। তবে ভরা মৌসুম চললেও মাছের সংকটে এবার শুঁটকি উৎপাদনে বড় ধরনের ভাটা পড়েছে। অল্প যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।

আত্রাই উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এখানকার শুঁটকির প্রধান বাজার রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও ঢাকা। পাশাপাশি ভারতেও রপ্তানি হয়। একসময় এ উপজেলায় প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে ১৫ থেকে ১৮ জন ব্যবসায়ী এই পেশায় সক্রিয় রয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আত্রাই রেলস্টেশনের দুই পাশে শুঁটকি শুকানোর চাতাল বসানো হয়েছে। নারী-পুরুষ শ্রমিকরা মাছ কাটা, ধোয়া, লবণ লাগানো ও রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকলেও মাছের অভাবে অনেক চাতাল ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আত্রাই উপজেলা বিল অধ্যুষিত এলাকা। আত্রাই নদী, ছোট যমুনা নদীসহ শতাধিক খাল-বিল রয়েছে এখানে। সাধারণত পানি কমতে শুরু করলে টেংরা, পুঁটি, খলসে, টাকি, শোল, চাঁদাসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ বাজারে ওঠে। তবে চায়না দুয়ারি, সুতি, কারেন্ট ও ভাদাই জালের অবাধ ব্যবহারে এবার পানি কমলেও মাছের দেখা মিলছে না। ফলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অধিকাংশ চাতাল বন্ধ ছিল। এতে চাহিদা অনুযায়ী শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।

ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী রামপদ শীল বলেন, “এ বছর মাছের খুব অভাব। যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে, মানভেদে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ২২০ টাকা দামে কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন ২০-২৫ মণ মাছের প্রয়োজন হলেও বাজারে ৭-১০ মণের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।”

ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান ও সবদুল প্রামানিক বলেন, কয়েক বছর আগেও এই সময় শুঁটকি পল্লী ছিল মুখর। কিন্তু এখন বর্ষার শুরুতেই অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় বাজারে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মাছের অভাবে অনেক চাতাল বন্ধ থাকায় নারী-পুরুষ শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছেন।

শুঁটকি চাতালের নারী শ্রমিক আনজুমান বেগম বলেন, “মাছ না থাকায় কাজ কমে গেছে। এই কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। এখন অনেক দিন কাজ পাই না।”

এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, শুঁটকির সঙ্গে জড়িতদের নিরাপদ ও মানসম্মতভাবে শুঁটকি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অবৈধ ও অসাধু উপায়ে মাছ শিকার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।