ঢাকারবিবার , ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিসের বিস্তার: শীর্ষে চীন, দ্রুত বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ ১:৩৩ অপরাহ্ণ । ৪০ জন

ডায়াবেটিস এখন আর কেবল একটি জীবনধারা-সংক্রান্ত রোগ নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে দ্রুত বিস্তৃত একটি নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছে, কোটি কোটি মানুষ বর্তমানে এই দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত এবং প্রতিবছর সেই সংখ্যা আরও বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এখনই কার্যকর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে এই সংকট বিশ্ব অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করবে।

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে চীন, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৪০.৯ মিলিয়ন। বিপুল জনসংখ্যা, দ্রুত নগরায়ণ এবং খাদ্যাভ্যাসে আমূল পরিবর্তন এই উচ্চ হারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৪.২ মিলিয়ন, যা দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুতর সতর্ক সংকেত। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩.০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে, আর খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে প্রায় ৩২.২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন।

এই পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায় যে, ডায়াবেটিস কেবল উন্নত বা উন্নয়নশীল কোনো এক শ্রেণির দেশের সমস্যা নয়; এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ইন্দোনেশিয়ায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৯.৫ মিলিয়ন, ব্রাজিলে ১৫.৭ মিলিয়ন এবং মেক্সিকোতে ১৪.১ মিলিয়ন। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের সহজলভ্যতা এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এসব দেশে ডায়াবেটিস দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে।

বাংলাদেশেও পরিস্থিতি কম উদ্বেগজনক নয়। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৩.১ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সচেতনতার অভাব এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করার প্রবণতা এই সমস্যাকে আরও গভীর করছে। একইভাবে জাপানে আক্রান্তের সংখ্যা ১১.০ মিলিয়ন এবং মিশরে ১০.৯ মিলিয়ন, যা দেখায় যে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও রোগটির বিস্তার সর্বত্র প্রায় সমান গতিতে এগোচ্ছে।

ইউরোপেও ডায়াবেটিসের প্রভাব স্পষ্ট। জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬.২ মিলিয়ন, স্পেনে ৫.১ মিলিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে ৪.০ মিলিয়ন। ফ্রান্সে প্রায় ৩.৯ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে ভুগছেন। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যেও ডায়াবেটিস দ্রুত বাড়ছে, যেখানে নাইজেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩.৬ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪.২ মিলিয়নের কাছাকাছি।

চিকিৎসাবিদরা সতর্ক করে বলছেন, ডায়াবেটিসের প্রভাব কেবল রক্তে শর্করার মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি হৃদরোগ, কিডনি বিকল হওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং স্নায়বিক জটিলতার মতো মারাত্মক সমস্যার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং কর্মক্ষম জনশক্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস মোকাবিলায় কেবল চিকিৎসার ওপর নির্ভর করলেই চলবে না। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সময়মতো রোগ শনাক্তকরণকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য নীতিকে শক্তিশালী করাই হতে পারে ভবিষ্যতের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম।