কর্মসূত্রে আমেরিকায় বসবাসরত যেসব ভারতীয় নাগরিক চলতি মাসে নিজ দেশে ফিরেছেন, তাঁদের অনেকেরই আমেরিকায় ফেরা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে আমেরিকায় কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) নবায়নের জন্য ভারতীয় নাগরিকদের নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট আচমকা বাতিল করা হচ্ছে, যা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে তিনজন অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞের বরাতে জানানো হয়েছে, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব ভারতীয় নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল, তাঁদের মধ্যে হাজার হাজার আবেদনকারীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হয়ে গেছে। নতুন করে যে তারিখ দেওয়া হচ্ছে, তা কয়েক মাস পরের হলেও সেটিও শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ভারতে এসে আটকে পড়েছেন বহু প্রবাসী ভারতীয়। কীভাবে তাঁরা আবার কর্মস্থলে ফিরবেন, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত এইচ-১বি ভিসাধারীরা আমেরিকায় ছুটির মৌসুম হওয়ায় ডিসেম্বর মাসকেই ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্য বেছে নেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ভিসা গ্রাহকদের ইমেলের মাধ্যমে জানিয়েছে, ওয়ার্ক পারমিটের জন্য সাক্ষাৎকার আয়োজন করতে দেরি হচ্ছে।
ইমেলে আরও বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংক্রান্ত একটি নতুন নিয়ম কার্যকর করেছেন। আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রম যাচাইয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। এ কারণেই পুরো প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, এইচ-১বি একটি অ-অভিবাসী ভিসা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত আমেরিকায় থেকে কাজ করার সুযোগ পান। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন এই ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। কিছুদিন আগে এইচ-১বি ভিসার আওতায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন সংস্থাগুলোর ওপর এক লক্ষ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা) ফি আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
এ ছাড়া কোন প্রক্রিয়ায় এবং কাদের মার্কিন সংস্থাগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়েও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বাড়ানো হয়েছে। ট্রাম্প ঘনিষ্ঠদের দাবি, এইচ-১বি ভিসার কারণে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে এবং বিদেশিদের নিয়োগ দিয়ে দেশীয় কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছে একাধিক মার্কিন প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, বিদেশি দক্ষ কর্মীদের সুযোগ সীমিত করলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও প্রযুক্তিখাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


