শিশুদের মাঝে ক্রমবর্ধমান স্থুলতার প্রবণতা রোধে ঘরে ও স্কুলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরতে আজ একটি পরামর্শ কর্মশালার আয়োজন করেছে আর্ক ফাউন্ডেশন। এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা পেশাজীবী ও নীতিনির্ধারকগণ।
মঙ্গলবার, ২৭ মে, ঢাকার বনানীর প্লাটিনাম গ্র্যান্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, গণমাধ্যম ও কমিউনিটির প্রতিনিধিরা যৌথভাবে স্কুল পর্যায়ে শিশু স্থুলতা প্রতিরোধে টেকসই ও কার্যকরী কৌশল নির্ধারণে একত্রিত হন।
কর্মশালায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা আলী বলেন, “সরকারি স্কুলগুলোর ক্যান্টিনে পুষ্টিকর খাবারের তালিকা প্রণয়ন জরুরি। পুষ্টিকর টিফিনের ব্যবস্থা করতে অভিভাবক, শিক্ষক ও ডিএনসিসিসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়নের কৌশল তৈরি করতে হবে।”
আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, “বাংলাদেশের শহর ও গ্রামীণ স্কুলগুলোতে শিশু স্থুলতার বিষয়ে তথ্য ও গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামগ্রিক জরিপ পরিচালনা করা দরকার। এর মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ে পুষ্টি নীতিমালা প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে।”
এনএনএইচপি ও আইএমসিআই-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, “স্কুলে যাওয়ার আগে প্রত্যেক শিশুর ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর নাস্তা গ্রহণ যদি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তবে তা স্থুলতা প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় পুষ্টি সেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার-ডা. জান্নাতুন নাঈম বলেন, “স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় শিশু স্থুলতার অন্যতম কারণ। তাই সুষম কার্যক্রম ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভিভাবকদের সচেতন ভূমিকা অত্যন্ত প্রয়োজন।”
ঢাকার একটি নামকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ খান বলেন, “শহরে ও স্কুলগুলোতে খেলার মাঠ সীমিত হওয়ায় শিশুদের শারীরিক কার্যক্রম কমছে, যা স্থুলতা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। শিক্ষকদের ও আমাদের মতো স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের পক্ষ্য থেকে যথাযথ নির্দেশনা দিতে হবে।”
এই কর্মশালাটি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ (NIHR) অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক গবেষণা উদ্যোগ ‘স্কলার্স’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে । লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় স্কুলশিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্থুলতা প্রতিরোধে এই প্রকল্প কাজ করছে।
মেক্সিকো, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের গবেষকরা স্থানীয়ভাবে উপযোগী সমাধান প্রণয়নে একযোগে কাজ করছেন। কর্মশালায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন এনজিও ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা স্কুল ও ঘরে শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।