ঢাকাশুক্রবার , ১ আগস্ট ২০২৫

প্রতিদিন বিটরুট ও চিয়া বীজের জল পান করার ৭টি উপকারিতা

রঞ্জন কুমার দে
আগস্ট ১, ২০২৫ ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ । ১৫৮ জন

সকাল বেলার পানীয় হিসেবে পুষ্টিগুণে ভরপুর কিছু বেছে নিলে তা সারাদিনের শক্তি জোগায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে বিটরুট ও চিয়া বীজের মিশ্রণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে জল পান করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন সকালে এই বিশেষ পানীয়টি পান করার ৭টি অসাধারণ উপকারিতা।

১. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে
বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। অন্যদিকে, চিয়া বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকর। এই দুটি উপাদান একসঙ্গে মিশে হৃদপিণ্ডের জন্য এক দারুণ সুরক্ষা কবচ তৈরি করে।

২. হজমশক্তি উন্নত করে
চিয়া বীজ ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। এটি জলে ভেজানোর পর জেলির মতো হয়ে যায়, যা হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বিটরুটেও ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এই পানীয় পান করলে আপনার হজমতন্ত্র সারাদিন সক্রিয় ও সতেজ থাকবে।

৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
বিটরুট এবং চিয়া বীজ উভয়ই কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার। চিয়া বীজের ফাইবার শর্করা শোষণকে ধীর করে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। বিটরুটের প্রাকৃতিক নাইট্রেটও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগী বা যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য এই পানীয়টি খুবই উপকারী হতে পারে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বিটরুট এবং চিয়া বীজ উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। বিটরুটের গাঢ় লাল রঙ বিটালাইন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে হয়, যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। চিয়া বীজেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন এই পানীয়টি পান করলে শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হয় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।

৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে
যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এই পানীয়টি একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। চিয়া বীজের ফাইবার জলে মিশে পেটে ফুলে ওঠে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয় এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। বিটরুটে ক্যালোরি কম এবং পুষ্টিগুণ বেশি, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে কিন্তু ওজন বাড়ায় না। এটি স্বাস্থ্যকর ওজন ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আদর্শ পানীয়।

৬. শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়ায়
খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রমের আগে বিটরুটের রস পান করলে তা শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিটরুটের নাইট্রেট পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়, যা শারীরিক কার্যক্ষমতা উন্নত করে। চিয়া বীজ ধীরে ধীরে শক্তি নির্গত করে, যা দীর্ঘক্ষণ ধরে কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে। তাই সকালে এই পানীয় পান করলে সারাদিন চনমনে এবং কর্মঠ থাকা যায়।

৭. ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে
বিটরুট এবং চিয়া বীজ উভয়ই ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। বিটরুটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি রক্ত পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চিয়া বীজের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলকে মজবুত ও চকচকে করে তোলে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে ভেতর থেকে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

এই পানীয়টি তৈরি করাও খুব সহজ: রাতে এক গ্লাস জলে ১-২ চামচ চিয়া বীজ ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে তাতে এক কাপ বিটরুটের রস মিশিয়ে পান করুন। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এই সহজ অভ্যাসটি দারুণ উপকারী হতে পারে।