বিশ্ব এইডস দিবস আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর)। এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধ জোরদার এবং আক্রান্তদের প্রতি বৈষম্যমুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতেই প্রতি বছর সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। এবছরের প্রতিপাদ্য- ‘চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে, নতুনভাবে এইডস প্রতিরোধ গড়ে তোলা’, যা বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও রোগ প্রতিরোধে নতুন করে গতি সঞ্চারের আহ্বান।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনুমিত এইচআইভি রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬০০। তবে ১৯৮৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৭০৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৮২০ জন। প্রাদুর্ভাবের হার এখনো ০.০১ শতাংশের কম, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থান। রোগী শনাক্তে ঢাকার পরেই রয়েছে রাজশাহী বিভাগ, এরপর চট্টগ্রাম। তবে সিরাজগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে-গত এক বছরে মিলেছে ১৪৪ জন, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশই সুঁই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকসেবী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে রোগ নিয়ন্ত্রণে তিনটি ‘৯৫ লক্ষ্য’ অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-৯৫% মানুষকে সচেতন করা, শনাক্ত ৯৫% রোগীকে ART সেবার আওতায় আনা এবং চিকিৎসাধীন ৯৫% রোগীর ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে আনা। এসব অর্জিত হলে রোগটির বিস্তার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের শেষে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে এইচআইভি নিয়ে বেঁচে ছিলেন। একই বছরে ১৩ লাখ মানুষ নতুন সংক্রমণে আক্রান্ত হন এবং ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যদিও আগের দশকের তুলনায় এসব সংখ্যা কমেছে, তবুও এখনো বিশ্বের ৯২ লাখ মানুষ সঠিক চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। ইউএনএইডস জানায়, প্রতিদিন বিশ্বে ৫ হাজার ৫০০ জন নতুনভাবে এইডসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৫০০ জন ১৫ বছরের নিচে, আর আক্রান্তদের ৬১ শতাংশই সাবসাহারা আফ্রিকার বাসিন্দা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু, কিশোর-কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং সামাজিক স্টিগমা এখনো এইডস প্রতিরোধের বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
২০২৫ সালের বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে-দীর্ঘমেয়াদি ইনজেকশনভিত্তিক ART ওষুধ এইডস চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পাশাপাশি উন্নত গবেষণা মডেল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংক্রমণের ধরণ নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণে সহায়তা করছে, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করবে।
তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলছে-অর্থসংকট এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ বৈশ্বিক ৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ২০২৫ সালের বিশ্ব এইডস দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সমতা ও ন্যায় নিশ্চিত না হলে এইডস মোকাবিলা অসম্ভব।
বিশ্ব এইডস দিবস শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয় নয়—এটি মানবিকতা, অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন। এদিন আমরা এইডসে মৃত্যুবরণকারী মানুষদের স্মরণ করি, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াই এবং প্রতিজ্ঞা করি-সমন্বিত প্রয়াসে একদিন অবশ্যই এইডস-মুক্ত পৃথিবী গড়া সম্ভব।


