শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ঘেরা মেঘাদল গ্রামে থোকায় থোকায় ঝুলছে একেলো, ডিকসন, ব্ল্যাক ম্যাজিক, বাইনুকা, ইসাবেলা, পারলেট, গ্রিন লং, আনাব-এ-শাহীসহ ৫০ জাতের লাল, কালো ও সবুজ আঙুর। ব্যতিক্রমী এই দৃশ্য এখন স্থানীয়দের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। বাড়ির আঙিনায় মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে এসব আঙুর চাষ করছেন কৃষি উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান।
ফলনের সাফল্যে এখন প্রতিদিনই বাগান দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ। পরামর্শ দিয়ে পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগও।
শখ থেকে শুরু, সফলতায় রূপান্তর
মিজানুর রহমান জানান, ২০২২ সালে তার বাবা আ. জলিল মিয়া ভারতে ভ্রমণে গিয়ে শখ করে দুটি জাতের ১০টি আঙুরের চারা নিয়ে আসেন। ১০ মাসের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে। এরপরই উৎসাহ পেয়ে ৩০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন আঙুর চাষ। বর্তমানে বাগানে রয়েছে ৫০ জাতের প্রায় ১৫০টি গাছ। এর মধ্যে ৫০টি গাছে ফল এসেছে।
২০টি গাছে ১০–১২ কেজি পর্যন্ত ফল ধরেছে, আর বাকিগুলোর বয়স কম থাকায় ফলন তুলনামূলকভাবে কম হলেও সম্ভাবনা দেখছেন মিজানুর।
বিদেশি জাত, দেশি জমিতে সাফল্য
আঙুরের সব জাত দেশীয় নয়। মিজান জানালেন, “একেলো, ডিকসন, ব্ল্যাক ম্যাজিক, বাইনুকা, ইসাবেলা, পারলেট, আনাব-এ-শাহীসহ অন্যান্য জাতের চারা আমি রাশিয়া, ইউক্রেন, পাকিস্তান, চীনসহ আটটি দেশ থেকে সংগ্রহ করেছি অনলাইনের মাধ্যমে।”
বাণিজ্যিক স্বপ্নে এগিয়ে চলা
মিজানুর জানান, বাগান করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। তবে পাহাড়ি এলাকার শ্রমিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাম্প্রতিক ফলন বিক্রি করেছেন ২৫০–৩০০ টাকা কেজি দরে। স্থানীয়দের আগ্রহ এতটাই যে, মিজানুর এখন দেড় একর জমিতে বড় পরিসরে বাগান তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ছাড়া তিনি ও তার বাবা মিলে শুরু করেছেন আঙুরের চারা উৎপাদনও। অনেকেই চারা কিনতে এবং পরামর্শ নিতে আসছেন।
স্থানীয়দের আগ্রহ ও প্রশংসা
বাবেলাকোনা গ্রামের দালবত মারাক বলেন, “মিজানুরের বাগানের আঙুর খেয়েছি, দারুণ মিষ্টি। বাজারের আঙুরের চেয়ে অনেক ভালো। পরিবারের জন্য দশটি চারা নেবো।”
শেরপুর শহর থেকে আগত মনির হোসেন জানান, “ফেসবুকে ছবি দেখে এসেছি। বাস্তবে এসে অবাক হয়েছি। এমন উন্নতমানের দেশি আঙুর ভাবাই যায় না। কিনলাম এক কেজি, সাথে পাঁচটি চারা।”
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাখওয়াত হোসেন বলেন, “মিজানুর পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছেন। তার পরিকল্পনা বড় পরিসরে চাষ করা। আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। নতুন উদ্যোক্তারাও চাইলে আমাদের থেকে সহায়তা পাবেন।”
শখের আঙুর এখন সম্ভাবনার বার্তা
ভারত থেকে শখের বশে আনা চারা এখন সম্ভাবনার গল্পে রূপ নিয়েছে। মিজানুর রহমানের হাতে গড়া এই বাগান শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকেই নয়, দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ফল চাষে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। তার উদ্যোগ অনুপ্রেরণা দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদেরও।


