দেশে শব্দদূষণের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা জারি হয়েছে। ২০০৬ সালের বিধিমালায় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকায় বিধিমালাটি হালনাগাদ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশকে জরিমানা করার ক্ষমতা প্রদান, নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট শাস্তির বিধানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা যুক্ত হয়েছে। এ বিধিমালার সঠিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। তাহলেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা আসবে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ বাস্তবায়নে আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভাতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপতিত্বে এবং সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মো: মিঠুনের সঞ্চালনায় আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সি এল পি এ) ট্রাস্ট এর সেক্রেটারী এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, এবং বক্তব্য রাখেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন।

এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫- তে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া জনপরিসরে লাউডস্পিকার, মাইক, অ্যাম্প্লিফায়ার ব্যবহার, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলে বনভোজন, নীরব এলাকায় আতশবাজি, পটকা, হর্নসহ সব ধরনের উচ্চশব্দসৃষ্টিকারী পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক অনুষ্ঠানে শব্দসীমা সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবল রাখা এবং অনুষ্ঠান রাত ৯টার মধ্যে শেষ করা, রাত্রিকালে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। বিধিমালার কঠোর ও যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ফলাফল আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নতুন বিধিমালায় ট্রাফিক পুলিশের কাছে শব্দ দূষণ বিষয়ে জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা প্রদান এবং ড্রাইভারদের পয়েন্ট কাটার বিধান যুক্ত হয়েছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ঢাকা শহর জোনিং প্রিন্সিপাল মেনে তৈরি হয়নি। ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকাই মিশ্র এলাকা। ফলে এখানে জোন অনুযায়ী শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আমাদের শহরগুলোতে শব্দদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহন। যান্ত্রিক যানের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতকে উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর পর নতুন বিধিমালাটি প্রণয়ন হয়েছে। সেজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দেশে অনেক ভালো আইন-নীতি-বিধিমালা আছে। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআরটিএকে যুক্ত করা হলে পরিবহন খাতে শব্দ দূষণ কমবে। নতুন বিধিমালা সম্পর্কে ট্রাফিক পুলিশদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। বিধিমালাটি বিষয়ে সকলকে অবগত করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সভাপতির ব্ক্তব্যে গাউস পিয়ারী বলেন, শুধু শব্দদূষণ বিধিমালা থাকলেই হবে না, আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো গাড়ির হর্ন নিয়ন্ত্রণ করা এবং ড্রাইভারদের সচেতন করা। পরিবেশ অধিদপ্তর যে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছে, সেগুলোতে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। বিধিমালাটি মিডিয়া এবং বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে, যাতে সবাই সচেতন হয়। সরকার, নাগরিক ও সংগঠন সম্মিলিতভাবে কাজ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পাবে।
আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর হেড অব প্রোগাম সৈয়দা অনন্যা রহমান, নেটওয়ার্ক অফিসার মোঃ আজিম খান, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশের পলিসি অফিসার তালুকদার রিফাত পাশাসহ আরো অনেকে।


