ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ প্রবাসী, স্বাস্থ্যসেবায় নেই বাংলাদেশি ডাক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৪, ২০২৫ ৩:২২ অপরাহ্ণ । ৫০ জন

মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মরত থাকলেও, সেখানে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বললেই চলে। ফলে অসুস্থ হলে অধিকাংশ প্রবাসী নির্ভর করতে হচ্ছে স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক বা ব্যয়বহুল প্রাইভেট মেডিকেল সেন্টারের ওপর। কেউ কেউ সামর্থ্যের অভাবে চিকিৎসা না নিলে তা ভবিষ্যতে জটিল রোগে রূপ নিতে পারে।

জোহরের কোটা তিঙ্গিতে কর্মরত প্রবাসী আব্দুল করিম জানান, “বাংলাদেশে পরিচিত চিকিৎসক দেখাতে পারি, মালয়েশিয়ায় তেমন কেউ নেই। রিপোর্ট বুঝতে সমস্যা হয়, চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি। অনেক সময় ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে সমস্যাটা ভালোভাবে বোঝাতে পারি না।”

কুয়ালালামপুরের গোম্বাকে কর্মরত শাহীন আলম বলেন, “ছোটোখাটো রোগ নিয়ে অনেকেই দেরি করেন, কারণ চিকিৎসার খরচ বহন করা কঠিন। যদি বাংলাদেশি চিকিৎসকসহ একটি মেডিকেল সেন্টার থাকত, প্রবাসীদের জন্য সেটা বড় সহায়তা হতো।”

মালয়েশিয়ায় মেডিকেল সেক্টরে কাজের যোগ্যতা ও নিবন্ধনের জন্য কঠোর শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মালয়েশিয়ায় প্র্যাকটিসের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং মালয়েশিয়া মেডিকেল কাউন্সিল (এমএমসি) এর সার্টিফিকেশনের পাশাপাশি ভাষা দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও পৃথক মূল্যায়নের শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব জটিলতা অনেক যোগ্য চিকিৎসকের জন্য প্র্যাকটিস কঠিন করে তুলছে।

ঢাকার মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক মানে কাজ করার সক্ষমতা রাখেন। তবে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সমঝোতা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ জরুরি।

চিকিৎসা শিক্ষা ও উন্নয়ন গবেষক ডা. তানভীর হোসেন বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরির প্রচুর সুযোগ আছে। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী সংখ্যা বেশি, সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো গেলে প্রবাসীদের চিকিৎসা ব্যয় কমবে এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি স্বাস্থ্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবন্ধন, মূল্যায়ন ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করে, তবে দক্ষ চিকিৎসক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশি মালিকানায় হাসপাতাল বা কনসালটেশন সেন্টার স্থাপন করলে লাখো প্রবাসীর জরুরি স্বাস্থ্যচাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

অনেক প্রবাসী মনে করেন, বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান থাকলে চিকিৎসাসেবা সহজ হবে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং জরুরি রোগ নির্ণয়ের হারও বাড়বে। জোহরের দীর্ঘদিনের প্রবাসী আবুল হাসান বলেন, “আমরা শ্রম দিয়ে দেশের রেমিট্যান্স বাড়াই। এখন সময় এসেছে আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার।”

মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ প্রবাসী হলেও কোনো বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা প্রবাসী সমাজে দুশ্চিন্তার বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিত উদ্যোগ নিলে প্রবাসীদের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করা সম্ভব।