ঢাকাশনিবার , ২ আগস্ট ২০২৫
  • অন্যান্য

নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদনের শীর্ষ ৫০ দেশে নেই বাংলাদেশ

রঞ্জন কুমার দে
আগস্ট ২, ২০২৫ ৩:৩০ অপরাহ্ণ । ১০১ জন

একবিংশ শতাব্দীর এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে, প্রতিটি দেশই নিজেদের নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের অনিশ্চয়তা—এই সবকিছুই খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার ধারণাকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। একটি দেশ তার নিজস্ব জমি, বাগান এবং মৎস্য সম্পদ ব্যবহার করে তার জনগণের জন্য কতটা সুষম খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম, তা নির্ধারণ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। সম্প্রতি ‘নেচার ফুড’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ১৮৬টি দেশের খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা এবং খাদ্য-ভিত্তিক খাদ্যতালিকাগত নির্দেশিকার মধ্যে ব্যবধান বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা দেশগুলোর জাতীয় খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছে। এই গবেষণার ফলাফলগুলি যখন ভিজ্যুয়ালাইজড করা হয়, তখন দেখা যায় যে, বিশ্বের মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেশই তাদের নিজেদের খাদ্য চাহিদা সম্পূর্ণরূপে মেটাতে সক্ষম, এবং দুঃখজনকভাবে, এই শীর্ষ ৫০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।

এই গবেষণাটি ‘লাইভওয়েল ডায়েটারি গাইডলাইনস’ (Livewell dietary guidelines) এর উপর ভিত্তি করে সাতটি প্রধান খাদ্য বিভাগকে তুলনা করেছে: ফল, শাকসবজি, ডাল, শ্বেতসারযুক্ত প্রধান খাদ্যশস্য (starchy staples), মাংস, মাছ এবং দুগ্ধজাত পণ্য। ‘লাইভওয়েল ডায়েট’ শুধুমাত্র খাদ্যের পুষ্টিগুণই নয়, বরং খাদ্য উৎসের স্থায়িত্বকেও বিবেচনা করে, যা দেশগুলোর র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিটি বিভাগে ১০০% রেটিং অর্জন করলে একটি দেশকে সেই নির্দিষ্ট খাদ্য বিভাগে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে ধরা হয়েছে। ১০০% এর উপরে রেটিং রপ্তানি সক্ষমতা নির্দেশ করে, আর এর নিচে হলে আমদানির প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। এই সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ আমাদের সামনে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে শুধুমাত্র ক্যালোরি বা শস্য উৎপাদনই নয়, বরং একটি সুষম এবং টেকসই খাদ্যাভ্যাসের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানের পর্যাপ্ততাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

গবেষণার সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্যটি হলো, এই ১৮৬টি দেশের মধ্যে শুধুমাত্র গায়ানা একাই সাতটি খাদ্য বিভাগের সবকটিতে ১০০% খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। দক্ষিণ আমেরিকার এই ছোট দেশটি তার উর্বর পলিমাটির সমভূমিকে কাজে লাগিয়ে চাল এবং শ্বেতসারযুক্ত মূল ফসলের বাম্পার ফলন নিশ্চিত করে। এছাড়াও, এর নদীভিত্তিক মৎস্য সম্পদ এবং চারণভূমি এতটাই সমৃদ্ধ যে, গায়ানা তার প্রায় ৯ লক্ষ বাসিন্দার প্রয়োজনীয় মাংস ও মাছের চাহিদা মেটানোর চেয়েও বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম। গায়ানার এই অনন্য অবস্থান বৈশ্বিক খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রেক্ষাপটে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা প্রমাণ করে যে, সঠিক কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার একটি দেশকে কতটা স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে।

তবে, গায়ানার এই সাফল্য একটি ব্যতিক্রম, কোনো সাধারণ নিয়ম নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পূর্ণ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা দেশগুলোর সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। ‘অল-স্টার ক্লাব’ নামে পরিচিত এই শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম এবং চীন ছয়টি খাদ্য বিভাগে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, যা গায়ানার পরেই তাদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে। এছাড়াও, আরও ২৩টি দেশ পাঁচটি খাদ্য বিভাগে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রমাণ করতে পেরেছে। এই পরিসংখ্যানগুলি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করাটা এখনও একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এর কারণ হতে পারে জলবায়ুগত সীমাবদ্ধতা, ভূমির অপ্রাপ্যতা, প্রযুক্তির অভাব, অথবা বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরতা, যেখানে একটি দেশ তার জন্য সস্তায় এবং সহজে পাওয়া যায় এমন খাদ্য আমদানি করতে পছন্দ করে। এই বাস্তবতা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে: একটি দেশ কি সব খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চেষ্টা করবে, নাকি বৈশ্বিক বাণিজ্যের সুবিধা নিয়ে তার নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে খাদ্য সরবরাহ করবে?

আঞ্চলিক বৈষম্যও এই গবেষণায় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় দেশগুলো ফল এবং শাকসবজির স্বয়ংসম্পূর্ণতায় বেশ সংগ্রাম করছে। সুপারমার্কেটগুলোতে ফলের প্রাচুর্য দেখা গেলেও, পরিসংখ্যান ভিন্ন গল্প বলে। শীর্ষ র্যাঙ্কিংয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া তার অভ্যন্তরীণ ফলের চাহিদার মাত্র ৩৩% মেটাতে পারে, লাটভিয়া মাত্র ১৩% এবং এস্তোনিয়া মাত্র ৩%। একই তিনটি দেশের জন্য শাকসবজি উৎপাদনও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। এর কারণ হতে পারে ইউরোপের শীতল জলবায়ু, যা নির্দিষ্ট কিছু ফল ও সবজি উৎপাদনে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে, অথবা উচ্চ শ্রম খরচ যা স্থানীয় উৎপাদনকে ব্যয়বহুল করে তোলে। ফলে, এই দেশগুলো তাদের ফলের এবং শাকসবজির একটি বড় অংশের জন্য আমদানির উপর নির্ভরশীল। তবে, দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। স্পেন তার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় ফল এবং শাকসবজির চারগুণ বেশি উৎপাদন করে, যা তারা উত্তর ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি করে। এটি প্রমাণ করে যে, জলবায়ু এবং কৃষি পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক বিশেষীকরণ কীভাবে খাদ্য উৎপাদনে ভিন্নতা আনতে পারে।

অন্যদিকে, এশিয়ার দেশগুলোর জন্য দুগ্ধজাত পণ্যের ঘাটতি একটি ধারাবাহিক সমস্যা। এশিয়ার বেশিরভাগ অংশের জন্য দুধ এবং পনির এখনও বিলাসবহুল আমদানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ভিয়েতনাম এবং চীন, যারা অন্যান্য পাঁচটি খাদ্য বিভাগে ভালো স্কোর করেছে, তাদের দুগ্ধজাত পণ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা যথাক্রমে মাত্র ১৪% এবং ২৯%। এই অঞ্চলের উষ্ণ ও ক্রান্তীয় জলবায়ু, ছোট চারণভূমির অভাব এবং সাংস্কৃতিক খাদ্যাভ্যাস – এই সবই বৃহৎ আকারের দুগ্ধ খামার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এশিয়ার অনেক ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাসে দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম, যা এর উৎপাদনের উপর কম জোর দেওয়ার একটি কারণ হতে পারে। তবে, কিরগিজস্তান এবং উজবেকিস্তানের মতো কিছু দেশ ব্যতিক্রম, যারা উচ্চ-উচ্চতার চারণভূমি ব্যবহার করে তাদের অভ্যন্তরীণ দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের সদ্ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট কৃষি কৌশলের মাধ্যমে কীভাবে আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই তালিকায় মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে, যা সাতটি খাদ্য বিভাগের মধ্যে চারটি খাদ্য বিভাগে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এটি কানাডার প্রায় সমান এবং যুক্তরাজ্যের (দুটি বিভাগ) দ্বিগুণ। যুক্তরাষ্ট্রের স্কোরগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়: ফল: ৭০%, শাকসবজি: ৬১%, ডাল: ১,২৫৯%, শ্বেতসারযুক্ত প্রধান খাদ্যশস্য: ১৮৮%, মাংস: ৭১৭%, মাছ: ৪৩%, দুগ্ধজাত পণ্য: ৪০৯%। যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল কৃষিজমি এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তির কারণে ডাল, শ্বেতসারযুক্ত প্রধান খাদ্যশস্য, মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্যে তাদের উচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। তবে, ফল, শাকসবজি এবং মাছের ক্ষেত্রে তাদের এখনও আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি নিবন্ধে যেমনটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, অনেক দেশের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য আমদানি করা সস্তা হতে পারে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের অর্থনৈতিক যুক্তিকে তুলে ধরে।

এবার আসা যাক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, কেন এই শীর্ষ ৫০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। যদিও এই গবেষণায় সরাসরি বাংলাদেশের ডেটা উল্লেখ করা হয়নি, তবে এশীয় দেশগুলোর সাধারণ প্রবণতা এবং বাংলাদেশের নিজস্ব ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে এর কারণগুলো অনুমান করা সম্ভব। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, যেখানে কৃষি জমির পরিমাণ সীমিত। যদিও বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং শ্বেতসারযুক্ত প্রধান খাদ্যশস্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, একটি সুষম খাদ্যতালিকায় শুধুমাত্র শস্যই নয়, বরং ফল, শাকসবজি, ডাল, মাংস, মাছ এবং দুগ্ধজাত পণ্যেরও পর্যাপ্ত জোগান থাকা প্রয়োজন।

এশীয় দেশগুলোর দুগ্ধজাত পণ্যের ঘাটতি একটি সাধারণ প্রবণতা, এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের দুগ্ধ উৎপাদন এখনও চাহিদার তুলনায় অনেক কম, ফলে একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয়। ফল এবং শাকসবজির ক্ষেত্রেও, যদিও স্থানীয় উৎপাদন রয়েছে, তবে বৈচিত্র্য এবং সারা বছর ধরে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ। অনেক ফল ও সবজি এখনও আমদানি নির্ভর। মাংস এবং মাছের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনের উৎস (যেমন, উন্নত মানের মাংস) নিশ্চিত করতে আমদানির উপর নির্ভরতা থাকতে পারে। ডাল এবং তৈলবীজের মতো ফসলের ক্ষেত্রেও উৎপাদন ঘাটতি দেখা যায়, যা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়।

এছাড়াও, ‘লাইভওয়েল ডায়েটারি গাইডলাইনস’ স্থায়িত্বের বিষয়টিকেও বিবেচনা করে, যা বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সীমিত সম্পদ এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে উৎপাদন সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, সংরক্ষণাগার, এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের দুর্বলতাও খাদ্য অপচয় এবং উৎপাদন সক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সমস্ত কারণগুলো সম্মিলিতভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশ হয়তো এখনও একটি সুষম এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যের সকল বিভাগে ১০০% স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়নি, যার ফলে এটি শীর্ষ ৫০টি দেশের তালিকায় স্থান পায়নি।

পরিশেষে বলা যায়, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি একটি জটিল এবং বহুমুখী ধারণা। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, কোনো একটি দেশের পক্ষে সকল খাদ্য বিভাগে সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের গবেষণাগুলি দেশগুলোকে তাদের খাদ্যের ঘাটতি চিহ্নিত করতে এবং সেই অনুযায়ী নীতি ও কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য, শস্য উৎপাদনে অর্জিত সাফল্যকে ধরে রেখে ফল, শাকসবজি, দুগ্ধজাত পণ্য এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য, যাতে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।