ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রায়শই ভুল ধারণা দেখা যায়, বিশেষ করে ফল খাওয়া নিয়ে। অনেকেই মনে করেন, ডায়াবেটিস থাকলে বুঝি সব ফল বর্জন করতে হয়। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয়। কিছু ফল রয়েছে যেগুলোতে চিনি কম, ফাইবার বেশি এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমন চারটি উপকারী ফল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. কিউই

কিউই একটি চমৎকার ফল যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বেশ কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয় না। কিউই ফল হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং অন্যান্য খাবার থেকে গ্লুকোজ শোষণের হার কমাতেও সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। এছাড়াও, কিউই ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর হালকা টক-মিষ্টি স্বাদ স্বাস্থ্যের পাশাপাশি জিহ্বাকেও তৃপ্তি দেয়।
২. আপেল

“প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে” – এই প্রবাদটি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। আপেল ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস, বিশেষ করে এর খোসায় পেকটিন নামক ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই ফাইবার শর্করা শোষণকে ধীর করে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। আপেলের পলিফেনল নামক উপাদান ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও ভূমিকা রাখে। আপেলের প্রাকৃতিক শর্করা (ফ্রুক্টোজ) রক্তে গ্লুকোজের উপর খুব কম প্রভাব ফেলে। তাই একটি মাঝারি আকারের আপেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এবং পুষ্টিকর একটি বিকল্প। তবে, আপেলের জুসের চেয়ে পুরো ফল খাওয়াই বেশি উপকারী, কারণ এতে ফাইবার অক্ষত থাকে।
৩. অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডো অন্যান্য ফলের মতো মিষ্টি না হলেও, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি সুপারফুড। এতে শর্করা এবং চিনির পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু স্বাস্থ্যকর চর্বি (একক-অসম্পৃক্ত ফ্যাট) এবং ফাইবারে ভরপুর। এই স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলো ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। অ্যাভোকাডো খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ এবং ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে – যা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, এতে পটাশিয়াম সহ ২০টিরও বেশি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
৪. বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, রাস্পবেরি)

বিভিন্ন ধরনের বেরি ফল, যেমন স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি এবং রাস্পবেরি, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ফলগুলোতে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন) প্রচুর পরিমাণে থাকে। বেরির ফাইবার রক্তে গ্লুকোজের শোষণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে, যা ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। বেরির গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও সাধারণত কম হয়। এরা ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজেরও ভালো উৎস। যেকোনো ধরনের বেরি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
মনে রাখা জরুরি যে, যেকোনো ফলই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীর শারীরিক অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। তাই, আপনার খাদ্যাভ্যাসে নতুন কোনো ফল যোগ করার আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


