ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ওয়ান হেলথ বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ওপর জোর: মৎস্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫ ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ । ২২ জন

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-এই তিনটির সমন্বয়েই প্রকৃত অর্থে ‘ওয়ান হেলথ’ বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বলেন, “আজ আমরা শুধু ধারণাগতভাবে নয়, বাস্তব অর্থেই একটি ‘আমরা’ হয়ে উঠেছি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ-এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একসঙ্গে বসা এই অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ওয়ান হেলথ কার্যক্রম: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যত কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ওয়ান হেলথ কেবল বক্তৃতার বিষয় নয়; এর জন্য প্রয়োজন বাস্তব কমিটমেন্ট, নীতিগত অঙ্গীকার এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করার মানসিকতা। খণ্ডিতভাবে কাজ করার সময় শেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন ‘হোল অব গভর্নমেন্ট’ ও ‘হোল অব নেশন’ অ্যাপ্রোচ।

তিনি আরও বলেন, মানুষ যেমন রোগের ভুক্তভোগী, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে মানুষই রোগের জন্য দায়ী। অনিরাপদ খাদ্য, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন, জুনোটিক রোগ, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, এ প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত ওয়ান হেলথ প্রকল্পে তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি ডিপিপির আওতায় তিনজন প্রকল্প পরিচালক রেখে কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিটি খাত সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য ও পরিবেশ-সবকিছু একসঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে ওয়ান হেলথ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে একটি কার্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকে কেন্দ্রস্থলে রেখে সমন্বিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস হলে তার চূড়ান্ত মূল্য সমাজকেই দিতে হয়। রাস্তা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হলেও একটি সুন্দরবন কিংবা একটি নদী নতুন করে সৃষ্টি করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও পরিবেশগত সংকট বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়-প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং মানুষ প্রকৃতির মালিক নয়, বরং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ওয়ান হেলথ বাস্তবায়নে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াভিত্তিক জটিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতাকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে কার্যকর পরামর্শক কমিটি গঠন এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণের আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ওয়ান হেলথের মূল কেন্দ্রে অবশ্যই মানবস্বাস্থ্য থাকতে হবে। মাছ, গবাদিপশু বা পরিবেশের স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ-কারণ শেষ পর্যন্ত এর প্রভাব পড়ে মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার ওপর। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ওয়ান হেলথ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য একটি ‘আই-ওপেনিং’ উদ্যোগ, যা মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতিকে এক লেন্সে দেখে স্বাস্থ্যঝুঁকি দ্রুত শনাক্ত ও সময়মতো মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরি করবে।

সেমিনারে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন, বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান যৌথভাবে ওয়ান হেলথ বিষয়ে সমন্বিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। সেমিনারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।